কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় মানুষ টংঘর বেঁধে উঁচু সড়কের পাশে আশ্রয় নিচ্ছে

এফএনএস (জয়দেব চক্রবর্তী; কেশবপুর, যশোর) : | প্রকাশ: ৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় মানুষ টংঘর বেঁধে উঁচু সড়কের পাশে আশ্রয় নিচ্ছে

কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল ও আলতাপোল এলাকার মানুষ যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি উপচে জলাবদ্ধতা বেড়ে নতুন করে মানুষের বাড়িঘরে ঢ়ুকে পড়ছে। টানা বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে কেশবপুরের হরিহর নদের বিপদ সীমার দুই ফুট উপরে উঠে এসেছে। পানি বাড়ার কারণে জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার নদ-নদী পলিতে ভরাট হওয়ার পাশপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে সুষ্ঠুভাবে পানি প্রবাহ হতে না পেরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

শনিবার সরেজমিন পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকুল এলাকায় দেখা যায়, সরদারপাড়ার মানুষের বাড়িতে পানি ঢ়ুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি। একইভাবে এক নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সাহাপাড়া খ্রিস্টান মিশনের পাশের সড়কটিতেও উঠে এসেছে জলাবদ্ধতার পানি। যশোর-চুকনগর সড়কের মধ্যকুল আমতলা এলাকায় জলাবদ্ধ মানুষ টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। টংঘরের পাশে দাঁড়িয়ে মধ্যকুল এলাকার হামিদা খাতুন (৪০) বলেন, এক মাস ধরে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়ে ঘরের ভেতর ঢ়ুকে পড়েছে। যে কারণে যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিতে হয়েছে। একইভাবে ওই এলাকার ভ্যানচালক জিন্নাত আলী বলেন, ঘরে পানি ঢ়ুকে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় এসে টংঘর বাধছি। অনেকেই এভাবেই টংঘর বেঁধে আশ্রয় নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। সাংবাদিক শাহিনুর রহমান বলেন  বাড়ির উঠানে পানি, আলতাপোল এলাকায় বসবাস রত সাংবাদিক শেখ শাহীন বলেন, বাড়ি ছেড়ে সড়কে আসার মতো পরিস্থিতি, দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে   এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আয়ুব খান বলেন, জলাবদ্ধ মানুষ সাহায্য চান না-তারা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান। বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকাটি জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মৎস্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। 

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, পলিতে নদ-নদী ভরাটের পাশিপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করছেন। দ্রুত ভবদহ অঞ্চলের হরি নদী অববাহিকার যে কোন একটি বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুসহ নদ-নদী খনন না করা হলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়বে। 

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন বলেন, তার ইউনিয়নে ১১টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪০০ তে পৌঁছেছে। আলতাপোল এলাকার ১১টি পরিবার সড়কের পাশের একটি উঁচু ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে রোববার পর্যন্ত কোন ত্রান সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে হরিহর নদে পানি বেড়ে দুই ফুট উপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে নদে পানি রয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ ফুট। স্বাভাবিক থাকার কথা ৮ দশমিক ৬৯ ফুট। তিনি আরও বলেন, হরিহর, আপারভদ্রা ও হরিনদীসহ ১০টি সংযোগ খাল পুন:খননের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে খনন কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান হরিহর নদের উৎপত্তিস্থল থেকে আপারভদ্রা নদীর তিন দশমিক ৭০০ মিটার খনন কাজ চলছে। পাশাপাশি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হতে উৎপত্তিস্থল থেকে হরিহর নদের চার কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হবে। খনন হলে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে