রাষ্ট্র সবার, তাই বিভাজনের নয়—ঐক্যের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
রাষ্ট্র সবার, তাই বিভাজনের নয়—ঐক্যের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি: তারেক রহমান

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকলেও জাতীয় ইস্যুতে মুখ ফিরিয়ে না থেকে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্র সবার, তাই বিভাজনের নয়—ঐক্যের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি।”

রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে অনুষ্ঠিত বিএনপির ‘বিজয় র‍্যালি’ উপলক্ষে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিকে ঘিরে বিএনপি এই র‍্যালির আয়োজন করে।

তারেক রহমান বলেন, “বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদ থাকবে, আলোচনা চলবে—এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ ধর্ম–দর্শন–মত যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার। রাজনীতিকদের মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়, সে জন্য এই ঐক্য জরুরি।”

গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে আমরা কেউ নিরাপদ ছিলাম না, আমাদের সন্তানেরাও নিরাপদ ছিল না। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, পুরো বাংলাদেশকে বর্বর বন্দিশালা বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে নারী–পুরুষ, সংখ্যাগুরু–সংখ্যালঘু কেউই নিরাপদ নয়।”

তারেক রহমান ‘২৪-এর গণআন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করে বলেন, “শুধু এক মাসেই বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গুম–অপহরণের শিকার হয়েছেন শত শত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী। এমনকি চার বছরের শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি খুনিদের বন্দুকের নল থেকে। দেশের সাহসী সেনা কর্মকর্তারাও ছিল হত্যাযজ্ঞের লক্ষ্যবস্তু।”

তিনি বলেন, “আজকের এই বিজয় র‍্যালি অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার প্রতীক। তবে এই পথ সহজ নয়। ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ এবং চরমপন্থা যেন নতুন করে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে, সেজন্য গণতন্ত্রকামী জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।”

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে "নাগরিক সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ সময়" উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, আমরা কী রকম বাংলাদেশ চাই। নিরাপদ ভবিষ্যৎ, রাজনৈতিক অধিকার এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এখনই রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র সংস্কারে আমরা স্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবও আমাদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। দেশের কল্যাণে এই রূপরেখা বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।”

বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে—ফ্যাসিস্ট শাসনে কেউই নিরাপদ ছিল না। আমাদের অধিকার হরণ করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। কাজেই আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক অধিকারের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও চর্চার জন্য।”

প্রসঙ্গত, বিজয় র‍্যালির পূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও সালাহউদ্দিন আহমদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক এবং দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিকাল সাড়ে চারটায় সমাবেশ শেষে র‍্যালি শুরু হয়, যেখানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে