বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বুধবার আমাদের যে লড়াই সে লড়াইয়ের ফসল পূর্ণতা পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। আমরা লড়াই করেছিলাম একটা স্বৈরাচারী শাসক যারা ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছিল তাদের পতনের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। আমরা আন্দোলন করেছিলাম তাদের পতনের পর একটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পূণ: প্রতিষ্ঠিত হবে। নানাভাবে এই প্রয়াসকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা জুলাই-আগস্টে অসংখ্য ছাত্র, অসংখ্য শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ, মা-বোন, সন্তানরা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা একটা কাপুরুষের মতো, ভীরু নারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এর আগেও সরকার পতন হয়েছে কিন্তু কেউ পালিয়ে যায় নাই।
তিনি বলেন, লড়াইটা শুধু ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য ছিল না, গণতন্ত্র পূণ: প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল। সেইজন্য আমরা নির্বাচনের দাবি করেছি। অনেকেই নানাভাবে বাঁধার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আমরা ক্রমাগথ বলেছি আমরা জনগণের শাসন চাই। আমরা চাই এমন সরকার দেশ পরিচালনা করুক যাদেরকে জনগণ নির্বাচিত করবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। জনগণকে জবাবদিহিতা করবে। এমন একটা গণতান্ত্রিক সরকার আমরা চাই।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য একটা সময় ঘোষণা করেছেন। লন্ডনে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যনের সাথে যে মিটিং হয়েছে সেই কথা রেখেছেন। উনি নির্ভাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন না। আইনে এই ঘোষণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেছেন নির্ভাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে। আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন অতি শীঘ্রই যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ষোল বছরে যারা গুম, খুন, জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের প্রতি আপনা দায় স্বীকার করেন না। আমরা কি তাদের প্রতি দায়বদ্ধ নই। তাদের স্বপ্ন পূরন করতে হলে আগামী দিনে শহীদ জিয়ার হাতে গড়া বিএনপিকে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্ভাচিত করতে হবে। আর এই নির্বাচনে বিজয়ের মূল মন্ত্র হলো জনগণের হৃদয় জয় করা। জনগণের ভালোবাসা এবং সমর্থন অর্জন করা। আজকের এই দিনে আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা শপথ নিন আমরা নেতাকর্মীরা এমন কথা বলবো না, এমন কাজ করবো না যাতে করে জনগণ কষ্ট পায়। জনগণ সন্তুষ্ট থাকলে আগামী নির্বাচনে ইনশাল্লাহ অবশ্যই আমরা বিজয়ী হবো।
বুধবার বিকেলে নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিজয় র্যালি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে সেখান থেকে একটি র্যালী বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে স্টেশন কৃষ্ণচূড়া চত্বরে এসে শেষ হয়।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিজয় র্যালিতে বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, উত্তর জেলা বিএনপির এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, একেএম মাহবুবুল আলমসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অংগ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা যে বিজয় উদযাপন করছি সে বিজয় এমনি এমনি আসে নাই। এ বিজয় আপনাদের সকলের সমবেত চেষ্টায় এসেছে। কিন্তু ষোল বছর আপনারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবিরাম লড়াই করেছেন আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী খুন হয়েছে। শত শত নেতাকর্মী খুন হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। আমাদের লাখো নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। কারো ব্যবসা নষ্ট হয়েছে, কারো চাকরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কেউ আত্মীয়-স্বজন হারিযেছেন, জেল খেটেছেন, পালিয়ে বেড়িয়েছেন কিন্তু তারপরেও কেউ লড়াইয়ের ময়দান ত্যাগ করেননি। আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন। আর সে কারনেই চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভূত্থান সংগঠিত হয়েছে। এই গণঅভূত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করি।
তিনি বলেন, লড়াইয়ে যারা গুম হয়েছেন, যারা খুন হয়েছেন, যারা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা বন্দি হয়েছেন, যারা নীপিড়ীত হয়েছেন, যারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের প্রতিও আমার গভীর শ্রদ্ধা রইল।