দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুবরণ করেছেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে রাজধানী নেপিদোর একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর তথ্য অফিস এক বিবৃতিতে মিন্ট সোয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুবিক জটিলতা এবং পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শেষদিক থেকে নেপিদোর সামরিক হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন প্রেসিডেন্ট। অবস্থার অবনতি ঘটতেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। এর পর আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি তার।
মিন্ট সোয়ের অসুস্থতা নিয়ে গত বছরের জুলাইতেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তার শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে খাওয়াও করতে পারছিলেন না। চলাফেরায়ও ছিল সীমাহীন বাধা। এসব কারণেই তিনি সরকারি কার্যক্রমে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এবং পরে দায়িত্বভার সাময়িকভাবে তুলে দেন সামরিক শাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে।
মিন্ট সোয়ে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। ওই অভ্যুত্থানে নোবেলজয়ী অং সান সু চিসহ গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের গ্রেপ্তার করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তারা। মিন্ট সোয়ে তখন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন এবং অভ্যুত্থানের পর জান্তার নির্দেশে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
মিয়ানমারের সামরিক শাসনের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন মিন্ট সোয়ে। ছদ্ম গণতন্ত্রের ছায়ায় শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় তার উপস্থিতি ও দায়িত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নানা সময়ে রাষ্ট্রীয় ডিক্রি অনুমোদন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তাকে সামনে রেখেই এগিয়েছে জান্তা সরকার। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার পর থেকে তিনি জনসম্মুখে আর আসতেন না। রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন।
মৃত্যুর খবর ঘোষণার সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিন্ট সোয়ের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে অন্ত্যেষ্টির নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর যেসব জান্তা নেতাদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল, তাদের মধ্যে মিন্ট সোয়ের নামও ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ তার ওপর ভ্রমণ ও সম্পদ হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।