জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ৬ জনকে এক বছর পর দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত ৬ জনকে এক বছর পর দাফন

রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট শায়িত করা হলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মর্গে পড়ে থাকা ছয়টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ। তারা নিহত হয়েছিলেন গত বছরের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গণ-অভ্যুত্থানে। রাষ্ট্রীয়ভাবে 'অজানা পরিচয়' হিসেবে স্বীকৃত এসব মরদেহ অবশেষে দাফনের ব্যবস্থা করা হয় আদালতের নির্দেশে।

এদের মধ্যে একজন নারী এবং বাকিরা পুরুষ। বয়স আনুমানিক বিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। তাদের কেউই আর ফিরে যাননি প্রিয়জনের কাছে। সেই অভ্যুত্থানের সময় নিহত হওয়া ৮৩৪ জনের মধ্যে এই ছয়জনের পরিচয় মেলেনি কোনো ডিএনএ বা ফিঙ্গারপ্রিন্টে। বহু মানুষ দাবিদার হিসেবে হাজির হলেও মিল হয়নি নমুনা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ মরদেহগুলো বুঝে নেয় দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন, রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মুনসুর এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান।

ফরেনসিক বিভাগ জানায়, ২০২৪ সালের ৭ থেকে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকা—যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, শাহবাগ ও পল্টন—থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি মরদেহে শর্টগানের গুলির চিহ্ন ছিল, অন্যগুলোতে ছিল ভোতা অস্ত্রের আঘাত।

অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, “তাদের প্রত্যেকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। শনাক্তের জন্য ডিএনএ নমুনা রাখা আছে।” আদালতের নির্দেশে অবশেষে মরদেহগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হলো। পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, মরদেহগুলোতে আঘাতজনিত চিহ্ন ছিল এবং ডিএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে যদি কোনো স্বজনের সঙ্গে ডিএনএ মিলে যায়, তাহলে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দাফন সেবা কর্মকর্তা কামরুল আহমেদ জানান, ছয়টি মরদেহ দুপুর ২টার দিকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রতিটি কবরে নম্বর দেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে শনাক্তকরণ সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে সংঘটিত হয় ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, যার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। সরকারি হিসাবেই নিহত হয় ৮৩৪ জন। কিন্তু কারা কোথায় মারা গেছেন, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অজানা থেকে যায়।

এই ছয়জনও সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া হাজারো নামহীন গল্পেরই অংশ। তারা কারা ছিলেন, কোন বিশ্বাস নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, তা আর জানা যাবে না—তবে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীন নীরবতার বিরুদ্ধে তাদের নিঃশব্দ বিদ্রোহ আজও ধ্বনিত হয় শোক আর অনিশ্চয়তায়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে