পুলিশ হেফাজতে থাকা ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ আগস্ট। এর আগে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন সদস্যের বিচারিক বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন। বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে এদিন শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম। তাঁদের সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এক সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন, যা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করে ১৩ আগস্ট দিন নির্ধারণ করে।
এই মামলায় অভিযুক্ত মোট ১৬ জনের মধ্যে আটজন বর্তমানে কারাগারে আছেন। বৃহস্পতিবার সকালেই তাদের পুলিশ প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। তারা হলেন:
ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী
সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম
পরিদর্শক আরাফাত হোসেন
এসআই মালেক
এসআই আরাফাত উদ্দিন
এএসআই কামরুল হাসান
আবজাল হোসেন
কনস্টেবল মুকুল
পলাতক আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ আরও আটজন। তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
মামলার প্রসঙ্গক্রমে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানী উপকণ্ঠের সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছয় আন্দোলনকারী তরুণ। পরে পুলিশের একটি ভ্যানে করে মরদেহগুলো তুলে নিয়ে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী, নিহতদের একজন তখনও জীবিত ছিলেন। তাকেও পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এই নৃশংস ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ঘটে। পরে ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২ জুলাই প্রসিকিউশন ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ৩১৩ পৃষ্ঠার বিস্তারিত নথি, ৬২ জন সাক্ষীর তথ্য, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ।
এই মামলার শুনানি শুরুর পর থেকে আদালত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেন। পলাতকদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ, সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ এবং অভিযোগ গঠনের শুনানি এগুলো অন্যতম।
আসন্ন ১৩ আগস্টের শুনানিকে কেন্দ্র করে মামলাটি আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপরাধের ধরন, প্রমাণ এবং নথিপত্র—সবকিছুই বিচারিক প্রক্রিয়ার উপযুক্ত স্তরে পৌঁছেছে। তবে এখন দেখার বিষয়, আসামিপক্ষ কী ধরনের বক্তব্য নিয়ে হাজির হয় এবং আদালত তা কীভাবে বিবেচনা করে।