ভোরবেলা যখন অনেক শিশু তখনো গভীর ঘুমে, সেই সময়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাড়ে পাঁচআনী গ্রামের এক শিশু উঠছে ফজরের নামাজে। কারণ নামাজ শেষেই সে মাঠে যাবে, ফুটবলের প্র্যাকটিস করতে। জুতা নেই, নেই ভালো বল তবু চোখে একটা অদম্য স্বপ্ন, একদিন বড় ফুটবলার হবেন। শিশুটির নাম সোহান, বয়স মাত্র ৬। পাচঁআনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোহান এখন ভাইরাল। ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার ফুটবল খেলার ভিডিও। ড্রিবল, পাস, গোল যেন বল তার পায়ের কথাই শোনে।
মানুষ বলছে, এ ছেলে একদিন মেসির মতো হবে। কিন্তু এই শিশুর পেছনের গল্পটা কি আমরা জানি? সোহানের বাবা মো. সোহেল প্রধান একজন সাইকেল মেকানিক। দিনমজুরির টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। তবু তিনি নিজের কষ্টের কথা ভুলে যান যখন সন্তানের চোখে ফুটবলের আলো দেখেন।
জুতা কিনে দিতে পারি না, কোচিং তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, আমার ছেলে দেশের হয়ে খেলবে। তাই ফজরের পর ওকে নিজেই মাঠে নিয়ে যাই। আবেগভরা কণ্ঠে বলছিলেন বাবা সোহেল। সোহানের একটাই ইচ্ছা মেসির মতো খেলতে চাই, দেশের হয়ে খেলতে চাই। এ কথা বলার সময় তার ছোট্ট দুই চোখ যেন আগুনে জ্বলে উঠছিল।
কিন্তু বাস্তবতা নির্মম এক জোড়া ভালো জুতা পর্যন্ত নেই। যে ছেলেটা নেট দুনিয়া কাঁপাচ্ছে, সে মাঠে নামতে পারে না শুধু পায়ের নিচে জুতা নেই বলে!
স্থানীয়রা বলছেন, সোহান শুধু আমাদের গ্রামের নয়, দেশের সম্পদ। সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে ওকে অনেক দূর নেওয়া সম্ভব। কলাকান্দা ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, ছেলেটি সত্যিই অসাধারণ প্রতিভাবান। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার নজরে আনার চেষ্টা করছি। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব।
এই দেশের প্রতিটি গ্রামে লুকিয়ে আছে এমন হাজারো সোহান। তাদের স্বপ্নগুলো হয়তো অভাবের দেয়ালে আটকে থাকে, বা হারিয়ে যায় সুযোগ না পাওয়ার অন্ধকারে।
তবু কেউ কেউ আলো হয়ে ওঠে। সোহানের চোখে সেই আলো আছে। আমরা যদি একটু হাত বাড়াই, হয়তো এই শিশু একদিন বাংলাদেশের পতাকা হাতে মাঠে নামবে।
এদিকে, চাঁদপুরের মেসিখ্যাত পিচ্চি সোহানের অবাক করা ফুটবলশৈলী সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। ভিডিও দেখে মুগ্ধ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
-সাফ জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হককে পাঠিয়ে দিলেন অর্থিক অনুদান।
আমিনুল হক বলেন, মাত্র ৫ বছর বয়সী এই মেসিখ্যাত পিচ্চি সোহানের দায়িত্ব এখন থেকে বিএনপি নিয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই এই দায়িত্ব নেয়া হলো। সোহানের বয়স ৭ বছর হওয়ার পর বিকেএসপি কিংবা যেকোন ভালো মানের ফুটবল ক্লাবে তাকে ভর্তি করারও আশ্বাস দেন তিনি।
৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের সাড়ে পান আনি গ্রামে সোহানের বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আমিনুল হক বলেন, সোহানের ফুটবল খেলা নিয়ে দক্ষতা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তারেক রহমান দেখেছেন। তার নির্দেশেই আমি দলের হয়ে সোহানের বাড়ীতে ছুটে এসেছি। এখন কিছু আর্থিক সহায়তা সোহানের জন্য দলের পক্ষে দেয়া হলো এবং এখন থেকে প্রতি মাসে সোহানের জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠানো হবে।
আমিনুল হক আরও বলেন, শুধু সোহানই নয় বরং এরূপ গ্রাম গ্রামান্তরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাবান প্রতিজন খেলোয়াড়কে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে বিএনপির। যদি আগামীতে রাষ্ট ক্ষমতায় বিএনপি আসে তাহলে অবশ্যই এর সুফল এই ক্ষুদে খেলোয়াড়রা পাবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সোহানদের পাশে সবসময় থাকবো এতটুকু আশ্বস্ত করছি।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ আগষ্ট চাঁদপুরের মতলব উত্তরের জহিরাবাদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাড়ে পাঁচ আনী গ্রামের প্রধানিয়া বাড়ীতে মোঃ সোহেল ও রেহেনা বেগম দম্পতির কোলজুড়ে জন্ম নেয় সোহান প্রধানিয়া।সোহান বর্তমানে কেজি ওয়ানে পড়ালেখা করে। তার বড় বোন মোসাম্মৎ সুরমা ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে।
সোহানের পিতা সাইকেল মেকানিক মোঃ সোহেল বলেন, আমি ২৫ বছর যাবৎ সাইকেল মেকানিক হিসেবে কাজ করছি। এই আয় দিয়েই টিনসেড ঘরে পরিবার নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। সোহানকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সে বড় হয়ে একজন ভালো মানের ফুটবল খেলোয়াড় হবে এবং দেশের সম্পদ হিসেবে পরিণত হবে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে আমি সোহানের যত্নও নিতে পারছি না। তাই সবার কাছে সহযোগিতা চাই যাতে সোহানকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
শিশু সোহান বলেন, আমার বাবাই আমাকে ফুটবল খেলা শিখাচ্ছে। নিয়মিত রাস্তায় বাবার দোকানের সামনে ও পাশের বালুর মাঠে আমি ফুটবল খেলি। আমি যাতে একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হতে পারি। সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, সোহানের ফুটবল নিয়ে কলাকৌশল সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি অভিভূত। তার প্রতিভা যাতে কোন সীমাবদ্ধতায় থেমে না যায় সেজন্য তার ও তার পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন থাকবে। আমরা আমাদের সুযোগ অনুযায়ী তার জন্য কি করা যায় সেদিক নিয়ে কাজ করবো।
এদিন সোহানের বাড়ীতে ফুটবলার আমিনুল হকের আগমনকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমকর্মীসহ ক্রিড়ানুরাগী,প্রশাসন ও বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন এসময় উপস্থিত ছিলেন, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য সংস্কার বিষয়ক কমিটির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ও চাঁদপুর-২ সংসদীয় আসনের (মতলব উত্তর - দক্ষিণ) এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রফেসর ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি'র প্রধান সমন্বয়ক (সাবেক) আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) বশির আহমেদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আজহারুল হক মুকুল, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের অন্যতম সদস্য এড. মফিজুল ইসলাম, তোফায়েল মিয়া প্রমুখ।