বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে আগুন: সবজি-মাছ-মুরগি-ডিম—সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে আগুন: সবজি-মাছ-মুরগি-ডিম—সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী

রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার যেন নতুন করে এক অস্থিরতার নাম। কয়েক সপ্তাহ আগেও কিছুটা স্বস্তিতে থাকা বাজার হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সবজি, মাছ, মুরগি, ডিম ও মসলার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত সবাই হিমশিম খাচ্ছেন বাজেট সামলাতে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও তালতলা ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত এক মাসের টানা বৃষ্টিপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাক-সবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে, নষ্ট হয়েছে ফসল। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, অজুহাত দেখিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত মুনাফা করার চেষ্টা করছেন।

সবজির বাজারে চলছে আগুনের মতো দাম
ঢ্যাঁড়শ, করলা, কাকরোল, গাজর, টমেটো, বেগুন—কোনোটিই এখন আর ১০০ টাকার নিচে নেই। ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, করলা ৫০-৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা এবং টমেটো ১৫০-২০০ টাকায়। শসা ১০০ টাকা, পেঁপে কিছুটা সস্তায় মিললেও অন্যান্য সবজির দাম নাগালের বাইরে।

খিলগাঁও তালতলা বাজারে ক্রেতা জহির উদ্দিন বলেন, “প্রয়োজনীয় সবজি কিনে খাওয়াও এখন আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের সাধ্যের বাইরে। ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এই পরিস্থিতিতে চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

কাঁচা মরিচের দামও লাফিয়ে বেড়ে ২০০-২৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০-১৬০ টাকার মধ্যে।

পেঁয়াজ-আদা-এলাচেও দামে হাহাকার
পেঁয়াজের বাজার যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। যেখানে এক সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় মিলত, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।

পেঁয়াজ বিক্রেতা নাসির বলেন, “চলতি বছর কৃষকের ঘরে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, আর এতেই বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে।”

এদিকে মসলার বাজারেও অস্থিরতা। আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০-২৫০ টাকায়। ১০০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৪০০ টাকার মতো।

চাল আর দাম কমার নাম নেই
মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম উর্ধ্বমুখী। মোটা চাল ৬০ টাকার নিচে নেই। মাঝারি মানের মিনিকেট বা নাজিরশাইল পাওয়া যাচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়, আর উন্নত মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই কমার লক্ষণ দেখাচ্ছে না।

মুরগি-ডিম-মাছের বাজারেও একই অবস্থা
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়। লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা ডজন, আর সাদা ডিম ১২৫ টাকায়।

মাছের বাজারেও বাড়তি চাপ। চাষের রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৫০ টাকা করে। রুই ৩৮০-৪৫০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৈ, শিং ও পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায়, বোয়াল ৮০০-৯০০, কোরাল ৮৫০, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও ইলিশের দামে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে—এক কেজির ইলিশ এখন ২২০০-২৪০০ টাকায় মিলছে, যা আগের তুলনায় কিছুটা কম।

গরু-খাসির মাংস কিছুটা স্থিতিশীল
মাংসের বাজারে তেমন বড় পরিবর্তন না থাকলেও দাম এখনও বেশ চড়া। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১২০০ এবং ছাগলের মাংস ১১০০ টাকায়।

ক্রেতার কান্না, বিক্রেতার যুক্তি—কী বলছে বাজার?
বাজার পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতা, পরিবহন ব্যয় এবং মৌসুমি বৈরিতা—সব মিলিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে। তবে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, সরকারের মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছেন।

ক্রেতা সাদ বলেন, “বাজারে তো কিছুদিন আগেই স্বস্তি ফিরেছিল। এখন আবার বৃষ্টির অজুহাতে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। সরকার যদি ঠিকভাবে নজরদারি করত, তাহলে এমনটা হতো না।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে