চিকিৎসকদের রাজনীতিতে উত্তাপ, শনিবার ভোটে ফিরছে ড্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম | প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
চিকিৎসকদের রাজনীতিতে উত্তাপ, শনিবার ভোটে ফিরছে ড্যাব

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ড্যাব) তাদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের উদ্দেশ্যে শনিবার (৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে যাচ্ছে। রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করবেন চিকিৎসকরা।

এবারের নির্বাচনে ড্যাবের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদ—সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব—নির্ধারিত হবে চিকিৎসকদের ভোটে। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১৩৯ জন।

ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০২৪ সালের ২৫ মে। এর আগেই, ২৪ মার্চ বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে এবং নতুন সম্মেলন আয়োজনে ১২ সদস্যের একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে। তবে সময়মতো কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি নানা জটিলতায়। দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন ঘিরে চিকিৎসক সমাজে এখন সাজ সাজ রব।

দুই প্রবীণ নেতৃত্বের লড়াই

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে দুটি শক্তিশালী প্যানেল। একদিকে আছেন অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ, যিনি ২০১৯ সালে প্রথম নির্বাচিত ড্যাব কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, যিনি ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।

ডা. হারুনের নেতৃত্বাধীন ‘হারুন-শাকিল’ প্যানেলে মহাসচিব পদে আছেন ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মেহেদী হাসান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. এ কে এম খালেকুজ্জামান দিপু। অন্যদিকে, ডা. আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ‘আজিজ-শাকুর’ প্যানেলে মহাসচিব প্রার্থী অধ্যাপক ডা. আব্দুস শাকুর খান, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. সাইফ উদ্দিন নিসার আহমেদ তুষার, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. তৌহিদ উল ইসলাম এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. আবু মো. আহসান ফিরোজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. ওবায়দুল কবির, যিনি আগে ড্যাব আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।

প্রচারণায় মুখর চিকিৎসক অঙ্গন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ড্যাব সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উদ্দীপনা। রাজধানীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ব্যানার-ফেস্টুনে সেজে উঠেছে। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দীর্ঘদিন সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা নতুন করে আবারো সমর্থন পেতে মরিয়া। আবার তরুণ চিকিৎসকরা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’–পরবর্তী ড্যাবের ভূমিকাও নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব ফেলেছে। ‘হারুন-শাকিল’ প্যানেলের চিকিৎসকরা মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ

নির্বাচনের প্রাক্কালে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে উভয় প্যানেল। হারুন-শাকিল প্যানেল দাবি করছে, প্রতিপক্ষ প্যানেল ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে এবং নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের বক্তব্য—ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমেই এসব ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে। নির্বাচিত হলে ৩১ দফার আলোকে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

অন্যদিকে আজিজ-শাকুর প্যানেল অভিযোগ করছে, ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তারা বলছে, অনেকে আজীবন সদস্য হয়েও তালিকায় নেই, আবার মৃত সদস্যদের নাম যুক্ত রয়েছে। এছাড়া গোপনে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তিরও অভিযোগ তুলেছে তারা।

তবে উভয় প্যানেলই নির্বাচনের গুরুত্ব স্বীকার করে বলছে, এই ভোট গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ তৈরি করবে এবং সংগঠনের ভিত আরও শক্তিশালী হবে।

ইতিহাস ও পরিপ্রেক্ষিত

ড্যাবের সূচনা ১৯৮৯ সালে। প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক কমিটি থেকে শুরু করে ২০১৯ সালে এসে প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। তখন ডা. হারুন ও ডা. আব্দুস সালাম নেতৃত্বে আসেন। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হচ্ছে।

ড্যাব কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হয়। ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় কমিটি বিলুপ্ত থাকায় সংগঠনের কর্মকাণ্ডেও স্থবিরতা দেখা দেয়।

এবার সেই জট কাটিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিতব্য ভোটের মধ্য দিয়ে চিকিৎসক সংগঠনটি নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে, যা শুধু ড্যাব নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক পরিসরেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে