নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চালকের অবহেলা ও ঘুমের কারণে মাইক্রোবাস খালে পড়ে একই পরিবারের সাতজন নিহতের ঘটনায় একমাত্র আসামি হিসেবে চালক এনায়েত হোসেন আকবরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে বেগমগঞ্জ থানায় নিহতদের স্বজন ও ওমানপ্রবাসী মোহাম্মদ বাহার উদ্দিনের বাবা আব্দুর রহিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হস্তান্তর করা হবে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে, যখন ওমান থেকে ছুটি কাটাতে ফেরা বাহার উদ্দিনকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা মাইক্রোবাসে গ্রামের পথে ফিরছিলেন। চন্দ্রগঞ্জের জগদিশপুর এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, এবং গাড়িটি সড়কের পাশের খালে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাবি লাবনী বেগম (৩০), ভাতিজি লামিয়া আক্তার (৯) ও রেশমি আক্তার (১০)। নিহতরা সবাই লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকার বাসিন্দা।
প্রাণে বেঁচে যান বাহার উদ্দিন, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন। তাদের অভিযোগ, যাত্রাপথে চালকের চোখে ঘুমের ভাব লক্ষ্য করে বারবার বিশ্রাম নেওয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন। এমনকি দুর্ঘটনার আগে গাড়ি একবার প্রায় উল্টে যাচ্ছিল বলেও জানান তারা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চালক এনায়েতের অবহেলা ও অসাবধানতাই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা এলাকার মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।
গাড়ির মালিক মো. রাসেল জানান, দুর্ঘটনার পর চালক তাকে ফোনে বিষয়টি জানান এবং প্রায় ৪০ মিনিট ঘটনাস্থলে ছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, চালক অভিজ্ঞ এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী, তবে ঘটনার দায় এড়ানো সম্ভব নয়।
লক্ষ্মীপুরের রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি চালক যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতো তাহলে দীর্ঘ যাত্রায় কুমিল্লা এলাকায় বিশ্রাম নিতেন। তাদের মতে, দায়িত্বহীনতার কারণেই এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানো হয়েছে।