চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত, খালাস স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত, খালাস স্থগিত

চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আনা একটি ধাতব স্ক্র্যাপ ভর্তি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। ৬ আগস্ট বন্দর এলাকায় ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেম’ দিয়ে কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তার সংকেত পাওয়া গেলে তা দ্রুত আলাদা করে রাখা হয় এবং খালাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

নথি অনুসারে, ঢাকাভিত্তিক আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেড পাঁচটি কনটেইনারে মোট ১৩৫ টন স্ক্র্যাপ আমদানির জন্য ব্রাজিল থেকে এটি আনে। কনটেইনারটি ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট এমভি মাউন্ট ক্যামেরন জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কনটেইনারের ভিতরে থোরিয়াম-২৩২, রেডিয়াম-২২৬ ও ইরিডিয়াম-১৯২ নামের তিন ধরনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ শনাক্ত হয়। প্রাথমিকভাবে এক মাইক্রোসিভার্ট বিকিরণ মাত্রা রেকর্ড করা হলেও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, কনটেইনারের ভিতরের স্ক্র্যাপ ও দেয়ালের কারণে প্রকৃত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা আরও বেশি হতে পারে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. মারুফুর রহমান জানান, কনটেইনারটি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে জানানো হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞরা সাইটে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই কনটেইনারটির গমনাগমন নজরদারি করলে দেখা যায়, এটি ব্রাজিলের মানাউস বন্দরে ৩০ মার্চ এমএসসি জাহাজে বোঝাই করা হয়। এরপর এটি পানামার ক্রিস্টোবাল, নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আসে। তবে এর মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র থাকার কারণে এই চার বন্দর থেকে অন্তত তিনটিতে তেজস্ক্রিয়তার সংকেত ধরা পড়ার কথা থাকলেও সেগুলোতে তা ধরা না পড়ে, কেবল চট্টগ্রাম বন্দরে অবশেষে ধরা পড়ে।

পরমাণু শক্তি কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসা, শিল্প ও গবেষণায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় উৎসগুলো সাধারণত বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয় যাতে বিকিরণ পরিবেশে ছড়ায় না। তবে দুর্ঘটনা বা অসতর্কতার কারণে এসব উৎস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা পরমাণু শক্তি কমিশনকে দ্রুত একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছি। তারা এসে কনটেইনারটি পরীক্ষা করবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।’

এর আগে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আসা একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়েছিল, যা পরে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নিরাপদে অপসারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্র রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ২০১১ সালে স্থাপন করা হয়েছিল।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে