নেছারাবাদে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মামলা

এফএনএস (গোলাম মোস্তাফা; নেছারাবাদও স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) : | প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
storage/2025/august/10/news/fair-news-service_68987c206cb04-1754823712.jpg

দুস্থ ও অসহায় মানুষদের অর্ধকোটি টাকার আমানত হাতিয়ে নিয়ে টাকা ফেরতের পরিবর্তে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ নৃপেন বাবুর বিরুদ্ধে। পিরোজপুরের নেছারাবাদে উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নৃপেন মন্ডল (৫০) নামে  এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমিতি পরিচালকের পরিচয়ে অর্ধকোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে টাকা ফেরৎ না দিয়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাজিয়া গ্রামের বেশ কিছু হত।  দরিদ্র, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি লোকের নিকট এককালিন, মাসিক আমানত আকারে ওই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ চাইতে গিয়ে উল্টো নৃপেন মন্ডলের দায়ের করা লুটের মামলায় হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। কথিত সমিতি পরিচালক নৃপেন মন্ডলের মামলায় হয়রানি হয়ে তার বিরুদ্ধে সঠিক বিচারে দাবিতে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসীরা।

অভিযোগে জানা গেছে, গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাজীয়া গ্রামের মৃত নগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে একসময় ঢাকায় একজন গামেন্টস শ্রমিকের কাজ করতেন। চাকরি ছেড়ে এলাকায় একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে সবার আস্থা অর্জন করে হিন্দু অধ্যাশিত এলাকায় নৃপেন মন্ডল হয়ে ওঠে সাধু। হটাৎ করে উপজেলার আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতির পরিচালক পরিচয়ে গ্রামের দিনমজুর থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবি লোকদের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্ধকোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে ফুলে ফেপে ওঠে নৃপেন মন্ডল। কয়েক মাস পূর্বে ওই সমিতি লাপাত্তা হলে গ্রাহকের মামলায় জেলে যান কথিত সাধু নৃপেন মন্ডল। এসময়, গ্রাহকদের ভয়ে নিজ বসতবাড়ীর মালমাল সরিয়ে গাঢাকা দেয় তার স্ত্রী। পরে নৃপেন মন্ডল জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ীতে আসলে গ্রাহকরা সবাই মিলে সঞ্চিত অর্থ ফেরৎ চায়। পরে দেনা থেকে রেহাই পেতে নৃপেন মন্ডল পিরোজপুর কোর্টে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য সুজিত বৈরাগী সহ ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে নিজ বসতঘর লুটের একটি সাজানো মামলা দেয়। এখন ওইসব গ্রাহকরা সঞ্চিত অর্থ ফেরৎ পাওয়ার পরিবর্তে নৃপেনের দায়ের করা মামলায় হয়রানি হচ্ছেন।

সবিতা মজুমদার(৬৫) নামে এক নারী বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। বাসায় হাস মুরগী পালন করি। এছাড়া কৃষি কাজ করি। ওইসব কাজ করে আমার ছেলে এবং আমি নৃপেন মন্ডলের কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা জমিয়েছি। টাকা নেয়ার সময় সে বলেছে, আমার কাছে টাকা রাখছেন, মেয়াদ শেষে আমার কাছ থেকে বুজে নিবেন। এখন টাকা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

ওই গ্রামের অর্নব ঠাকুর নামে এক যুবক বলেন, নৃপেন মন্ডল গ্রামের অনেক সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে আনুমানিক অর্ধকোটি টাকা আমানত নিয়েছে। এখন তাদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেনা। এ নিয়ে আমাদের গ্রামের ইউপি সদস্য সুজিত মেম্বার সবার টাকা ফেরৎ দিতে নৃপেন মন্ডলকে অনুরোধ করেছে। একারনে তিনি মেম্বার সুজিত সহ গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো তাদের নামে একটা মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এর সঠিক বিচার দরকার।

ইউপি সদস্য সুজিত কুমার বৈরাগী বলেন, নৃপেন একটি সমতি পরিচালক পরিচয়ে গ্রামের মানুষদের ভুল বুজিয়ে আনুমানিক অর্ধকোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে ফেরৎ দিচ্ছেনা। গ্রামের সবাই আমার কাছে এ নিয়ে নালিশ করেছে। আমি নৃপেন মন্ডলকে টাকা ফেরৎ দিতে বলেছিলাম। পরে তিনি মানুষদের পাওনা টাকা ফেরৎ না দিয়ে আমাকে সহ পাওনাদারদের বিরুদ্ধে কোর্টে ঘরবাড়ী লুটের একটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে।


অভিযোগের বিষয়ে নৃপেন মন্ডল বলেন, মেম্বার সহ বেশ কিছু লোক আমার ঘরবাড়ী লুট করেছে। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেছি। আমি কোন সমিতির পরিচালক নয়। আমি ওই সমিতিতে বেতনে চাকরি করেছি। মালিক জেলে, আমার কিছু করার নেই।

নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, এখানে আমার কিছু করার নেই। ভুক্তভোগীদের নৃপেন মন্ডলকে আসামী করে কোর্টে মামলা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে