মৌলভীবাজারে কফি চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল

এফএনএস (আতাউর রহমান কাজল; শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার) :
| আপডেট: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম | প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
মৌলভীবাজারে কফি চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল

মৌলভীবাজারে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কফি চাষ। জেলার শ্রীমঙ্গল, রাজনগর ও সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কফি বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রধানত এরাবিকা ও রোবাস্টা--এই দুটি জাতের কফি চাষ হচ্ছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর এবং আকবরপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কফি চাষ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন জায়গায় বিনামূল্যে চারা বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আকবরপুরের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, তার কফি বাগানে বর্তমানে ১,৮০০ কফি গাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক দফা ফলন পেয়েছেন এবং লক্ষাধিক টাকার কফি ফল বিক্রি করেছেন। তিনি আশাবাদী, আগামী বছর ফলন ও লাভ দুই-ই আরও বাড়বে।

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া গ্রামের আতর আলীর বাগানে রয়েছে প্রায় ৩০০ কফি গাছ। তিনি ইতোমধ্যে ২-৩ বার ফলন পেয়েছেন এবং ১০-১২ হাজার টাকার কফি বিক্রি করেছেন।

মৌলভীবাজার কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, শ্রীমঙ্গলের জাগছড়া চা বাগানে তিনি ২০০ চারা দিয়েছেন। সেখানে ইতোমধ্যে কফি চাষ শুরু হয়েছে।

এছাড়া রাজনগরের উত্তরবাগ চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার মো. লোকমান চৌধুরী বলেন, গত বছরের শেষ দিকে তাদের বাগানে ৩,০০০ কফির চারা রোপণ করে নতুন কফি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি আরও বলেন, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি ও টিলা সমৃদ্ধ এলাকা কফি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ু কফির জন্য অনুকুল হওয়ায় বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক। ইতোমধ্যে এ জেলায় কফি চাষ সমপ্রসারণের জন্য একটি প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি চাষিদের প্রশিক্ষণ, মানসম্মত চারা এবং প্রক্রিয়াজাতকরন সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মৌলভীবাজার আগামী দশকের মধ্যে কফি উৎপাদনে দেশের শীর্ষ অবস্থানে যেতে পারবে। এতে শুধু কৃষকের আয়ের উৎস বাড়বে না, পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এছাড়াও যদি মৌলভীবাজার জেলায় পরিকল্পিতভাবে কফি চাষ বিস্তৃৃত করা যায়, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই এ জেলার কফি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী উপযোগী হতে পারে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌলভীবাজারে শুধু চা নয়, কফির ক্ষেত্রেও দেশের শীর্ষ উৎপাদনকারী এলাকায় পরিণত হতে পারে। কৃষকের স্বপ্ন আর সরকারি উদ্যোগ মিলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এখানকার কফি হতে পারে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য একটি নতুন কৃষিপণ্য।

মৌলভীবাজার  জেলার কফি চাষ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। চা পেরিয়ে কফির পথে মৌলভীবাজারের এই যাত্রা সফল হলে বাংলাদেশের কৃষিতে একটি নতুন অধ্যায় রচিত হতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে