ভূঞাপুরে ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস উৎযাপন

এফএনএস (সৈয়দ সরোয়ার সাদী রাজু; ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল) : | প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম
ভূঞাপুরে ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস উৎযাপন

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস উৎযাপন উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ চত্তরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবু আবদুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মন্ডল, চাঁদ মিয়া, নূরুল আমীন নান্নু, ফজলুল হক ভূইয়া প্রমুখ। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। 

৭১’এর এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে ভূঞাপুর যমুনা নদী হয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদী পথে ভূঞাপুরের মাটিকাটা নামক স্থানে আসলে কাদেরিয়া বাহিনীর দুর্ধর্ষ সাহসী চৌকশ কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা ও এলাকার লোকজন নিয়ে জাহাজ গুলোতে আক্রমণ চালায়। তাঁদের অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও অল্প সংখ্যক সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস.ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩, ও এস.টি রাজন ধ্বংস করার মাধ্যমে হানাদারদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন। জাহাজগুলো আক্রমণ ও দখল করে ১ লক্ষ ২০ হাজার বাক্সে আনুমানিক তৎকালিন ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১১আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পযর্ন্ত তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে ৩ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং আহত হয় অন্তত ২০জন। বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘ ৯মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখিনের নজির আর কোথাও নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।

পরবর্তীতে সিরাজকান্দী জাহাজমারা যুদ্ধে বিদ্ধস্ত জাহাজ ও জাহাজ থেকে খোয়া অস্ত্র সম্ভার উদ্ধারের লক্ষ্যে পাক বাহিনী চারদিক থেকে পর্যায়ক্রমে সিরাজকান্দী মাটিকাটাসহ ভূঞাপুরে জল, স্থল ও আকাশ পথে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিবাহিনী সেই অস্ত্র দিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করে। জাহাজমারা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ও খোয়া যাওয়া অস্ত্র গোলা বারুদের ঘটনা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহুল ছিল যে, হারানো অস্ত্রসম্ভার উদ্ধার ও মুক্তিবাহিনীকে উৎখাতের জন্য আগত পাকিস্তানী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান লে.এ.কে নিয়াজি। তিনি ভূঞাপুর ডাকবাংলোতে অবস্থান করে অভিযান পরিচালনা করছিলেন। এই ব্যাপক তৎরপরতা সত্ত্বেও হানাদার বাহিনী তাদের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। হানাদার বাহিনীর ৪৭ ব্রিগেড এই অঞ্চল দখলের চেষ্টা করে। বিমান বাহিনীর দুটি স্যাবর জেট বোমা হামলা চালায়। কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর লুট করা অস্ত্র দিয়েই হানাদার বাহিনীকে সফলভাবে প্রতিহত করে। যুদ্ধকালীন গোলাবারুদ, ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের গোলা বারুদের আঘাতে এবং পাক বাহিনীর পাল্টা হামলা ও বিমান আক্রমণে এলাকার লোকালয়, জনপদ, ঘর বাড়ী ও প্রচুর সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসম সাহসীকতার জন্য ততকালিন বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” উপাধিতে ভূষিত করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে