অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে ফিরে স্বস্তিতে: অর্থ উপদেষ্টা

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে ফিরে স্বস্তিতে: অর্থ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার সচিবালয়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বললেন, “আমরা ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত আর্থিক খাতের সংস্কার চালিয়ে যাবো। অর্থনীতির প্রতিটি খাতে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য। আমরা অর্থনীতিতে খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছি, কিন্তু এখনো নিরাপদ পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাইনি। স্বস্তি এসেছে, কিন্তু আত্মতুষ্টি নয়। এই মনোভাব নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।”

ড. সালেহউদ্দিন আরও যোগ করে বলেন, “আমরা গত এক বছরের মধ্যে একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, রিজার্ভ সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, এমনকি বৈদেশিক বিনিয়োগের ধীরগতি। তবুও ধাপে ধাপে নেওয়া নীতিমালা ও সংস্কারের ফলে অর্থনীতি এখন ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে দেশের অর্থনীতি ছিল চরম চাপের মুখে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের মতো। কিন্তু বর্তমান আর্থিক বছরের শেষে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।”

‘২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ শতাংশ, যা তখন ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ধাপে ধাপে নীতি হস্তক্ষেপ, খাদ্য আমদানি সহজীকরণ, বাজার মনিটরিং ও জ্বালানি খাতের কিছু স্থিতিশীলতার কারণে তা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে নেমে এসেছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে এখানেই থেমে গেলে হবে না। লক্ষ্য থাকবে মুদ্রাস্ফীতি আরও কমিয়ে ৬ শতাংশের আশেপাশে নিয়ে আসা, যাতে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ হ্রাস পায়’-উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন যে সংস্কার কার্যক্রম চলছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, খেলাপি ঋণ কমানো, কর ব্যবস্থা স্বচ্ছ করা, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, তা অব্যাহত থাকবে।

অর্থ উপদেষ্টা মনে করেন, দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উন্নতি বড় ভূমিকা রেখেছে। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়া, জ্বালানির দামের ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা, এবং প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন পুনরুদ্ধারের পথে।

প্রবাসী আয়ে জুলাই মাসে রেকর্ড ২.২ বিলিয়ন ডলার এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। যদিও অর্থনীতি স্বস্তির জায়গায় এসেছে, কিন্তু এখনও আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আছে, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ছাড়া এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন অর্থ উপদেষ্টা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে