স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ যতীন সরকার আর নেই

বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) বেলা পৌনে তিনটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

কয়েক মাস ধরেই অধ্যাপক যতীন সরকার বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও দীর্ঘদিন ধরে পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। জুন মাসে শোওয়ার ঘরের বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে তিনি পড়ে গিয়ে রাইট ফিমার নেক ফ্যাকচার হয়। এরপর রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।

জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘকাল তিনি মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

লেখক হিসেবে যতীন সরকার পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কারসহ ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’, ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু-দর্শন’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’ ও ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় অবদানের পর ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে নেত্রকোনায় বসবাস শুরু করেন। শেখ বাহার মজুমদার জানিয়েছেন, বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যু হয়। লাশটি হাসপাতালে রাখা হবে এবং বিকেল ৪টায় জেলার উদীচী কার্যালয়ে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। পরে নেত্রকোনায় তাঁর নিজ বাড়িতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।