অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বহিস্কার

মুক্তাগাছায় অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

এফএনএস (মোঃ ফেরদৌস; মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
মুক্তাগাছায় অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

মুক্তাগাছায় মুদির দোকানে ৩৫০ টাকা বাকির তুচ্ছ ঘটনায় ফাহিম নামে এক অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে । অভিযুক্ত  ছাত্রদল নেতা ও কর্মীদের বহিস্কার করা হয়েছে।  প্রতিবাদে এলাকার জনগন গত বুধবার রাতে ময়মনসিংহ জাালপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিবসহ ১২ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিমের মৃত্যু হলে এলাকার জনগন ফুসে উঠে। ঘঠনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। 

এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বোর্ডঘর মোড় এলকার বাসিন্দা মজনু মিয়ার ছেলের ইয়াছিনের কাছে একই এলাকার মুদির দোকানদার রাসেল ৩৫০ টাকা বাকি পেত। এ ঘটনায় মজনু মিয়ার ছেলে রাসেল ও তার ভাতিজা অটোরিকশা চালক ফাহিমের কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে সোমবার দুপুরে মানকোন বোর্ডঘর মোড়ে মুদির দোকানদার রাসেলের পক্ষ হয়ে মানকোন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিব মিয়ার নেতৃত্বে একদল যুবক একত্রিত হয়। পরে সেখানে ফাহিমকে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। পরে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে স’মিলের কাঠ দিয়ে ফাহিমকে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। তাকে ফেরাতে গেলে তার চাচা মজনু মিয়া, দাদী ফিরোজা খাতুন, বোন ফারজানা খাতুন, চাচাতো ভাই ইয়াছিন গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিমের মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহত ফাহিমের মা রুবি আক্তার বাদি হয়ে মুক্তাগাছা থানায় ছাত্রদল নেতা সজিব মিয়াকে এক নম্বর আসামী করে ১২ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

বুধবার দুপুরে নিহত ফাহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। ফাহিমের নয় মাসের কন্যা শিশু ফাওজিয়াকে নিয়ে  তার স্ত্রী খাদিজা বুক চাপড়ে কান্না করছে। পাশেই তার দাদা হাকিম ও তার দাদী ফিরোজা খাতুন মাটিতে লুটে নাতিকে হারিয়ে কান্না করছে। তার বোনেরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। এ যেন এক পুরো বাড়িজুড়ে শোকের মাতম বইছে।

নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম নয় মাসের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে বলেন, আমর এই শিশু সন্তান তার বাবার জন্য পাগল। বাবাকে না দেখলে সে কান্না করে। এখন কে তার কান্না থামাবে।  কে তাকে দুধ কিনে দিবে । আমার এই সন্তানের ভবিষ্যত কি। আমার স্বামীকে বিনা দোষে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি তার খুনিদের ফাঁসি চাই। 

সাংবাদিকদের দেখা মাত্র ফাহিমের দাদা কান্নায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার আদরের নাতীকে দোকানের সামান্য ৩৫০ টাকা বাকির জন্য সজিব ও তার সহযোগিরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। এখন আমার ছেলে ও বউমা কি নিয়ে থাকবে। আমি জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। 

সন্ধায় ময়না তদন্ত শেষে ফাহিমের লাশ তার গ্রামের বাড়ী নেওয়ার পথে এলাকাবাসী লাশ সামনে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম ও অফিসার ইনচার্জ রিপন চন্দ্র গোপ দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। 

মুক্তাগাছা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মঞ্জুরুল হক আরিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সজিব হাসান, ছাত্রদল কর্মী আবির ও মারুফকে ছাত্রদল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে মুক্তাগাছা থানা ওসি রিপন চন্দ্র গোপ বলেন, দোকানের বাকি নিয়ে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অটোরিকশা চালক ফাহিমের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়। থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে