স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল \ স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮দিনের চলমান আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারী ছাত্রদের ধাওয়া করে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৫ জনকে আহত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত ছাত্ররা। ওইদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পর পরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
এরপূর্বে ১৩ আগস্ট সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর পরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
তিনি বলেন, ১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে।
মহিউদ্দিন রনি আরও বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজসহ দেশের সকল সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিলো স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। যেকারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন।
মহিউদ্দিন রনি অভিযোগ করে বলেন, মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোন প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। একারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করবো।
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালীন সময় ছাত্ররা আমাদের কটুক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এসময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।
উত্তপ্ত শেবামেক \ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আল্টিমেটাম দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে বিএম কলেজ \ স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনে জনভোগান্তি হলে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ। পাশাপাশি আগামী ৩০ কার্যদিবসের জন্য আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিগুলো পূরণসহ মেডিক্যালের সকল সিন্ডিকেট ও দালালদের নির্মূল করতে সক্ষম না হলে পুনরায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।