ফেব্রুয়ারিতে নিবার্চন হওয়া জরুরি: বদিউল আলম

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
ফেব্রুয়ারিতে নিবার্চন হওয়া জরুরি: বদিউল আলম

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই প্রধান’ শীর্ষক ছায়া সংসদে যোগ দিয়ে বললেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে নিবার্চন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া জরুরি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।”

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। এবারের নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকবে। সব পক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে ভোটাররা এবার নিঃসংকোচে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো টাকার খেলায় মত্ত থাকলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা মুখ্য হলেও প্রার্থী, ভোটার, নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যমসহ সব অংশীজনের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”

‘ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে। ছাত্ররা অনেক ভালো ভালো কর্মকাণ্ড করে থাকে। তবে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয়। ছাত্ররা কোনো দলের লাঠিয়াল হবে-এটা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে’ বলে মনে  করেন তিনি।

ড.বদিউল আলম বলেন, “সংসদ নির্বাচনে পিআর ও আসনভিত্তিক-উভয় পদ্ধতিরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে আসনভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে নিম্নকক্ষ গঠন এবং আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।”

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এখন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, সেটা সরকার ও নির্বাচন কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায়ই সিদ্ধান্ত নেবে। আর আওয়ামী লীগ ছাড়া আগামী নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে।

বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থাই তাকে স্বৈরাচারের পরিণত করেছে। এজন্যই সংস্কার পরিবার প্রয়োজন। নির্বাচন ব্যবস্থা পুরনো ব্যবস্থায় চললে নির্বাচন আবারও বিতর্কিত হবে। স্বৈরাচার সৃষ্টির পথ থেকে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘নির্বাচনের প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। সনাতন নাকি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে এখনো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ শেষ হয়নি।

‘এ অবস্থায় জুলাই সনদে স্বাক্ষরসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নতুনভাবে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন করা সম্ভব না হলে দেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। তাই গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের গতিকে বেগবান করা উচিত। তবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটারসহ সকল অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে স্বৈরাচারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির অপসংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি বর্জন করে নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে কোনো বিভেদ তৈরি করা যাবে না।

‘যদি আগামী নির্বাচন আয়োজন নিয়ে এই বিভেদ ও মতবিরোধ বাড়তে থাকে, তাহলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বিভেদের সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি দেশে অরাজকতা তৈরি করতে পারে। তবে কেউ কেউ দেশে ১/১১ ও গৃহযুদ্ধের যে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে, তা অমূলক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ও শক্তি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই প্রধান’ শীর্ষক ছায়া সংসদে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকেরা বিজয়ী হন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে