পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারী বৃষ্টির ফলে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশটিতে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ৩২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিম এলাকার খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার একটি সরকারি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলটসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ৩০৭ জন মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশই আকস্মিক বন্যা ও বাড়িঘর ধসে প্রাণ হারিয়েছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বন্যায় কমপক্ষে ৭৪টি ঘর ধসে গেছে। সেখানে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে এর পাঁচজন ক্রু মারা গেছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৯ জন পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের। এছাড়া আরও পাঁচজন মারা উত্তরাঞ্চলের গিলগিট-বালিস্তান এলাকায়।’
উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়েজি বলেন, ‘ত্রাণ সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারি বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ভারী যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুল্যান্স পরিবহন করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ জায়গায় সড়ক বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা হেঁটে দুর্গম এলাকায় পৌঁছচ্ছেন।’
তিনি আরো জানান, ‘জীবিতদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার করলেও অনেকেই যেতে চাইছেন না। তাদের স্বজনরা এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন।’ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক সরকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি পাহাড়ি জেলা - বুনের, বাজউর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা ও বাত্তাগ্রামকে দুর্যোগাক্রান্ত এলাকা ঘোষণা করেছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে আরো ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এ ছাড়া জনগণকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রতিনিধি সৈয়দ মুহাম্মদ তায়্যব শাহ বলেন, ‘এ বছরের বর্ষা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে এবং দেরিতে শেষ হবে।’ তিনি আরো জানান, ‘আগামী ১৫ দিনে বর্ষার তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে।’
বুনের জেলার আরেক বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘পুরো এলাকা ভয়াবহ খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এই ছোট গ্রামে কে বেঁচে আছে আর কে মারা গেছে। আমি আমার পড়ানো শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার করছি। মনে হয়, প্রকৃতি যেন এই শিশুদের ওপর এক অসহনীয় পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়েছে।’