ভেঙ্গে যাচ্ছে সৈয়দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
ভেঙ্গে যাচ্ছে সৈয়দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো

নীলফামারীর সৈয়দপুর আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয় প্রায় আড়াই বছর পুর্বে।  এ সময়ের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো। এখন অনেক ঘরের চাল নেই। কোন কোন ঘর ভেঙ্গে গেছে। বর্যায় চাল দিয়ে পানি পড়ে। ঘরে থাকা যায় না। তাই অনেকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে।কেউ কেউ স্বল্প মুল্যে সরকারি এ ঘরগুলো হাতবদল করে চলে যাচ্ছে। আবাসনের এক বাসিন্দা জানান,তিনি ছিলেন ভুমিহীন। থাকতেন রেলওয়ে স্টেশনের প্লাট ফর্মে।

আবেদন করার পর তিনি আবাসনে পান একটি ঘর। প্রথমে বেশ ভালোই ছিল। পরে ঘরের টিন ফুটো হয়ে যায়। দেয়াল চুয়ে পানি পড়ে। ঘরে থাকা যায় না। এগুলো সংস্কারে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি ভিক্ষে করে খাই। কোথায় পাব ঘড সংস্কারের এতো টাকা। সরকার এঘরগুলো সংস্কারে কেন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

বর্তমানে এ অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোদ্দ বোতলাগাড়ী  মৌজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

এ আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী ও বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্র জানায়, গত ২০২৩ সালে এ মৌজার একটি অংশে গৃহহীন মানুষদের বাস করার সুবিধার্থে কমপক্ষে ৩০০ পরিবারের জন্য একটি করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সুবিধাভোগী প্রতি পরিবারকে দুই শতক জমিসহ একটি করে বাড়ি দেয়া হয় বরাদ্দ। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের হাতে বাড়ি ও জমির মালিকানা হিসাবে সাফ কবলা দলিলও বুঝিয়ে দেয়া হয়।

বিগত ২০২৩ সালে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ করা হলেও বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয় অক্টোবর মাসে। সব মিলে বাড়িগুলো নির্মাণের বয়স প্রায় আড়াই বছর পার হতে চলেছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে বাড়িগুলো ভেঙ্গে পড়া শুরু করেছে। অনেক বাড়ির পাশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অনেক বাসিন্দা জানিয়েছে। এমন অবস্থায় এসব বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে অন্যের বাড়িতে রাত্রিযাপন করছে।

কথা হয় ১২৪ ও ১২৫ নং ঘরে বসবাসকারী জান্নাতি বেগম ও নুরজাহান বেগমের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে জানান, এবারসহ তিনবার বাড়ি ভাঙ্গার ঘটনা ঘটল। এর আগেও দুইবার বাড়ি ভাঙ্গার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কতৃর্পক্ষ বাড়ি মেরামতে কোন নজর দেয় না। যারা বাস করে তারাই কোনমতে মেরামত করে বাস করে আসছে। তবে এবারে যেভাবে বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে তাতে বসবাসকারীরা ভাঙ্গা বাড়ি মেরামত করার সামর্থ্য রাখে না। এজন্য আমরা বাড়ি মেরামত করে দেয়ার জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গত ৭ জুলাই আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কতৃর্পক্ষের তরফ থেকে নেই মেরামতের কোন উদ্যোগ। এমতাবস্থায় আমরা ছোট ছোট শিশু সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

 আবাসনে বসবাসকারী ছোবরাতুন বানু,আরিফুল ইসলাম, মনোয়ারা খাতুন জানান, প্রায় দুই বছর আগে বাড়ি বরাদ্দ পেয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেই বাড়িগুলো ধ্বসে পড়ছে। বসবাস অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তার মতে বাড়ি নির্মাণে অনিয়ম করায় সামান্য বৃষ্টির পানির তোড়ে বাড়িগুলো ধ্বসে যাচ্ছে।

নির্মাণের এতো অল্প সময়ে বর্ষার পানির চোটে বাড়ি বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে কথা হয় একজন আবাসন প্রকৌশলীর সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাড়ি নির্মাণের সময় ভিত্তি দেয়া হয়েছে একেবারে নড়বড়ে। সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণেও ছিলো অনুপাতের হেরফের। ফলে সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেই বাড়িগুলো বসবাসহীন হয়ে যাচ্ছে। 

প্রকাশ থাকে যে, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয় স্ব স্ব উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে। আর দেখভাল করা হয় প্রধানন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এজন্য এলাকা ভেদে একেকজন প্রকল্প পরিচালক কাজ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব কর্মকর্তাদের অনৈতিকতার কারণে আবাসন প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে হয়েছে অনিয়ম। আর এর খেসরাত দিচ্ছে বসবাসকারী গরীব মানুষরা।

কথা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এমএম আলী রেজা রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, অতি দ্রুত আবাসনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে ঘরগুলোর খারাপ অবস্থা হতে পারে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ আবু ছাইদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই- আলম সিদ্দিকী বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে