রাশিয়ার অনাগ্রহ যুদ্ধ বন্ধ প্রক্রিয়া জটিল করছে: জেলেনস্কি ও বৈশ্বিক কূটনীতির চাপে ইউক্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
রাশিয়ার অনাগ্রহ যুদ্ধ বন্ধ প্রক্রিয়া জটিল করছে: জেলেনস্কি ও বৈশ্বিক কূটনীতির চাপে ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার (১৭ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছেন, রাশিয়ার যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় ইউক্রেনে যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়া একের পর এক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছে। কবে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে তা এখনও জানি না। এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।”

সোমবার জেলেনস্কি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন। এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানাবেন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, তার লক্ষ্য শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং স্থায়ী সমাধান প্রতিষ্ঠা। ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “এটি হবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ, যুদ্ধবিরতি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।”

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের পর ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ফোন করে বলেছিলেন, “আগুন থামাতে হবে, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।” জেলেনস্কি পরে সামাজিক মাধ্যমে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং ক্রেমলিন কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত শিশুদের মুক্তি।

এর আগেও ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধবিরতি চেয়েছিলেন, কিন্তু আলাস্কা বৈঠকের পর তার অবস্থান স্পষ্ট পরিবর্তিত হয়ে স্থায়ী সমাধানের দিকে অগ্রসর হয়েছে। ইউক্রেন বরাবরই দ্রুত যুদ্ধবিরতি এবং পরে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দাবি করে আসছে। পুতিনও ট্রাম্পকে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে ইউক্রেনকে ডনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, এবং এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝিয়া ও খেরাসনের সম্মুখভাগে যুদ্ধ স্থগিত করবে।

রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে এবং আট বছর পর পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেছে। ডনবাসকে রাশিয়ার ভূখণ্ড দাবি করে তারা লুহানস্কের বেশিরভাগ অংশ এবং দোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেন আগেই ঘোষণা করেছে, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল হস্তান্তর করবে না, কারণ পরে এটি আগ্রাসনের জন্য ব্যবহার হতে পারে।

সিবিএস কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপীয় নেতারা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কিকে বৈঠকে চাপ দিতে পারেন। তবে তারা মনে করেন, জেলেনস্কি অন্তর্ভুক্ত না হলে শান্তির চূড়ান্ত পথ নির্ধারিত হবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইনসহ ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, “পরবর্তী পদক্ষেপে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও আলোচনা করা উচিত। রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখতে প্রস্তুত।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, “আলাস্কার বৈঠকের মাধ্যমে আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি। তবে পরবর্তী ধাপে জেলেনস্কি ছাড়া আলোচনা অসম্পূর্ণ হবে।” এদিকে কিয়েভের সাধারণ মানুষ বৈঠকের ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন। পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রবীণ সেনা সের্হি অর্লিক বলেন, “আলোচনায় হাত মেলাতে হয়, কিন্তু লালগালিচা আর হাঁটু গেড়ে থাকা সেনাদের দৃশ্য ভয়াবহ, এর কোনো মানে নেই।”

বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বলেছেন এবং মনে করেন, মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নির্মূল করাই শান্তির ভিত্তি হওয়া উচিত।