চাঁদপুরের মেঘনায় পণবাহী একটি কার্গো জাহাজ থেকে অপরিশোধিত চিনি চোরা চালান হবার সময় তা রুখে দিয়েছে নৌ পুলিশ। জাহাজ ভর্তি ওই চিনি পাচারের চেষ্টার অভিযোগে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হয়। এরমধ্যে চারজন চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মাহফুজের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদান করে। অন্য চারজনের মধ্যে একজনকে দুই দিনের রিমান্ড এবং অন্য তিনজনসহ মোট সাতজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এর আগে শনিবার দুপুরে চাঁদপুর সদরের হরিনাঘাট এলাকায় মেঘনা নদী থেকে এমভি সি ওয়েস্টিন-১ নামক কার্গো জাহাজ থেকে তাদেরকে আটক করে চাঁদপুর নৌ থানা পুলিশ। এ তথ্য জানান, চাঁদপুর নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিল্লাল আজাদ।
অভিযুক্তরা হলেন- মেহেদী হাসান মুন্না ওরফে আকাশ (২৭), মো. শফিকুল (২৮), মো. নুরুজ্জামান (৩২), মো. মানিক (৩৮), শরীফ মির্জা (৪০), মজিবুর রহমান সর্দার (৪০), বাচ্চু বেপারী (৩৫) ও জাহাজের মাস্টার আইয়ুব মৃধা (৪৫)।
এমভি সি ওয়েস্টিন-১ নামে এই কার্গো জাহাজ গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে অপরিশোধিত ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আব্দুল মোমেন চিনি কলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
৪ আগস্ট চাঁদপুরের মেঘনায় পৌঁছে জাহাজটি। এর পরের দিন জাহাজের মাস্টার আইয়ুব মৃধা ও আরো কয়েকজন মিলে খাবারের সঙ্গে অন্যদের নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। একপর্যায়ে অচেতন করে এসব চিনি জাহাজ থেকে অন্যত্র পাচারের চেষ্টা করে। তবে নির্ধারিত সময় অপরিশোধিত চিনি নিয়ে জাহাজটি গন্তব্যে না পৌঁছায় এর সন্ধানে নামেন মালিক পক্ষ। তারপর ১০ দিনের মাথায় মূল ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন মালিকপক্ষ।
এদিকে, বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি পাচারের ঘটনায় চাঁদপুরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনায় চাঁদপুর শহরের দুজন জড়িত। যারা ওই ৮ জনের মধ্যে রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- শরীফ মির্জা ও মজিব সর্দার। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দব্যসামগ্রী বিশেষ করে ওপরের অপরিশোধিত চিনি, ভোজ্য তেল, সার, গম,সরিষাসহ এবং জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পতেঙ্গা থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ মুন্সিগঞ্জ ফ্যাক্টরিতে ও বিভিন্ন তেলের ডিপুতে সরবরাহের সময় চাঁদপুর নদী এলাকায় এসব চোরাচালান হয়ে আসছে। এ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন জাহাজ চাঁদপুর যাত্রা বিরতির নাম করে পণ্য নিয়ে নোঙ্গর করে এবং জাহাজ মাস্টারের যোগসাজশে চাঁদপুরের চোরাচালানি চক্র রাতের আঁধারে জাহাজ থেকে তেল চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য নামিয়ে এনে ট্রলারযোগে অন্যত্র পাচার করছে। চাঁদপুর মেঘনা নদীর হাইমচর চরভৈরবী,সদর উপজেলার হনারচর,পুরান বাজারের দোকান ঘর, বড় স্টেশন সংলগ্ন এলাকা,মতলব এলাকার কানুদি,একলাশপুর ও মোহনপুর হচ্ছে নৌ পথের জাহাজ থেকে পণ্য চোরা চালানোর চিহ্নিত স্পট। এখান থেকে চোরাই পণ্য মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড় চরাঞ্চল দিয়ে পাচার হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন যমুনা রোড,কানুদী এবং মতলব মোহনপুরে রয়েছে নদীর চোরাকারবারীদের বড় নেটওয়ার্ক।
নৌ পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে চাঁদপুরের নদীর পথের চোরাকারবারি কয়েকজন ধরা পড়ল। কার্গো এবং লাইটার জাহাজের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ার ছোট ছোট ট্রলার বাল্কহেড থেকেও কৌশলে পণ্য পাচার করা হয়। বহু বছর যাবত চাঁদপুর মেঘনায় এসব চোরাচালান হয়ে আসছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।