সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যেই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যেই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। সোমবার (১৮ আগস্ট) দেশটির ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শুরু হবে রোববার (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫)। পরবর্তী ধাপগুলোর তারিখ পরে জানানো হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, জান্তার এই ঘোষণা মিয়ানমারের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনী আয়োজনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে সামরিক শাসনকে নতুনভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নিমজ্জিত। গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা ও বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এখনো বহু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেখানে ভোটগ্রহণ ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, চলমান সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভি জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ইতোমধ্যে ৫৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি দেশব্যাপী প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আরও ৬টি দল অনুমোদন ও নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে বড় রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি), কার্যত নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছে। এর নেত্রী সু চি এখনো কারাগারে বন্দি আছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব এলাকায় সামরিক বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেসব স্থানে নির্বাচন কার্যত সম্ভব নয়। তবু জান্তা সরকার দেশব্যাপী ৩০০-এরও বেশি নির্বাচনী এলাকায় ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। গত বছর ভোটার তালিকা তৈরির জন্য দেশজুড়ে আদমশুমারি চালানো হলেও ৩৩০টি শহরের মধ্যে মাত্র ১৪৫টিতে জরিপ সম্পন্ন করা যায়।

২০২১ সালের নির্বাচনে সু চির দল ব্যাপক বিজয় অর্জন করলেও সামরিক বাহিনী ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। তবে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কোনো প্রমাণ পাননি, যা ফলাফল পরিবর্তন করতে পারত। এ কারণেই নতুন করে ঘোষিত নির্বাচনী পরিকল্পনাকে তারা অগ্রহণযোগ্য বলছেন।