জমি ক্রয়-বিক্রয়ে রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে আরোপিত উৎস কর যদি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে তার ফল উল্টো হতে বাধ্য-কক্সবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তারই উদাহরণ। নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে জেলার ৮১টি মৌজায় নাল জমির ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ২৫ হাজার, আবাসিক জমিতে ৫০ হাজার এবং বাণিজ্যিক জমিতে এক লাখ টাকা উৎস কর আরোপের ফলে জমি বাজার কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। পরিস্থিতি কতটা অস্বাভাবিক, তা বোঝা যায় কুতুবদিয়ার চরধুরুং মৌজার উদাহরণ থেকে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এক একর (১০০ শতক) জমির দাম যেখানে মাত্র ৮০ হাজার টাকা, সেখানে উৎস কর হিসেবে দিতে হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা-সাথে নিবন্ধন ফি ও অন্যান্য খরচ আরও ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, জমির সরকারি মূল্যের চেয়ে উৎস করই ৩১ গুণ বেশি। এই বৈপরীত্য কেবল অবাক করার মতো নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্যও। উৎস কর বৃদ্ধির পর থেকে জেলার অনেক মৌজায় সাফকবলা দলিল নিবন্ধন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমে এসেছে, কারণ বায়নানামা বা পারিবারিক দান দলিল থেকে রাজস্ব আসে না। জেলা রেজিস্ট্রার নিজেও স্বীকার করেছেন, নীতির ফলে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্ষতি হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে, কেন সিটি করপোরেশন এলাকার মতো উৎস কর কাঠামো একটি মফস্বল ও উপকূলীয় এলাকায় প্রযোজ্য করা হলো, যেখানে জমির প্রকৃত বাজারদর তুলনামূলক কম? কউকের আওতায় আনার ফলে জমির দাম কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে তা সিটি করপোরেশনের সমপর্যায়ের নয়। উপরন্তু, কুতুবদিয়া বা টেকনাফের মতো অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা সাগরে বিলীন হওয়া জমিতেও এই উচ্চ কর আরোপ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকারের রাজস্ব বাড়ানো জরুরি, তবে তা হতে হবে বাজার বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জনগণের নাগালের মধ্যে। অন্যথায় জমি বাজার স্থবির হয়ে যাবে, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং সরকারেরও ক্ষতি হবে। এখনই প্রয়োজন নীতিমালা পুনর্বিবেচনা, স্থানীয় বাস্তবতা অনুযায়ী উৎস কর পুনঃনির্ধারণ, এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য টেকসই ও গ্রহণযোগ্য কর কাঠামো প্রণয়ন। অর্থনীতির মৌলিক নিয়ম হলো-অতিরিক্ত কর রাজস্ব কমিয়ে দেয়। কক্সবাজারের জমি বাজার সেই সতর্কবার্তাই দিচ্ছে।