গ্রেপ্তার না করায় পাঁচ ঘণ্টা পর থানা থেকে ফিরে গেলেন শিক্ষার্থীরা

এফএনএস (মোঃ সাইফুল ইসলাম; বাবুগঞ্জ, বরিশাল) : | প্রকাশ: ২০ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
গ্রেপ্তার না করায় পাঁচ ঘণ্টা পর থানা থেকে ফিরে গেলেন শিক্ষার্থীরা

স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হতে এসেও অবশেষে গ্রেপ্তার না করায় পাঁচ ঘণ্টা পর থানা থেকে ফিরে গেছেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার প্রধান সমন্ময়ক মহিউদ্দীন রনিসহ শিক্ষার্থী ও জনতা। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তারা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ড ত্যাগ করেন।

এর আগে ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মহিউদ্দীন রনিসহ আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা নিজেদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। টানা পাঁচ ঘন্টা তারা থানা কম্পাউন্ডের মধ্যে অবস্থান ধর্মঘট করা সত্বেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেননি। থানা কম্পাউন্ডে অবস্থানকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বেলাল হোসাইন পিপিএম, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) অলক কান্তি শর্মা মহিউদ্দীন রনিসহ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার হওয়া বিএম কলেজের ছাত্র ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের সমন্ময়ক হোসাইন আল সুহানের মুক্তির দাবি করেন, অন্যথায় তাদের (শিক্ষার্থী) গ্রেপ্তারের কথা বলেন। এ সময় মহিউদ্দীন রনি ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বেলাল হোসাইনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন উপ-কমিশনার ইমদাদ হুসাইন।

আলোচনার সময় মহিউদ্দীন রনি বলেন, পুলিশ কমিশনার বিএম কলেজের ছাত্র সুহানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। সুহানকে জুলাই যোদ্ধা দাবি করে রনি আরো বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়েছে জয় বাংলা বলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা বাহিরে থাকবে, আর দালাল ও সিন্ডিকেট সদস্যরা ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা জুলাই যোদ্ধারা কারাগারে যাবে।

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে পুলিশ কমিশনার বলেছেন আমাকে (মহিউদ্দীন রনি) ধরতে পুলিশ নাকি তারা করেছে। কিন্তু আমাকে ধরতে তারা করতে হবে কেন? আমি থানায় এসেছি এখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হোক। গ্রেপ্তার করলেও যদি স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার হয় এবং সাধারণ মানুষের উপকার হয়, তাহলে সেই কারাবরণ আমিসহ সহযোদ্ধারা মাথা পেতে নেবো। পরে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘক্ষণ পুলিশের সাথে কথা বলে থানা কম্পাউন্ডে অবস্থান গ্রহণ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থানা কম্পাউন্ডের মধ্যে বসে অবস্থান ধর্মঘট করার পরেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার না করায় তারা ফিরে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পুলিশ সুহানের মুক্তির বিষয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা গ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ কোনো বাঁধা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, থানা হচ্ছে নাগরিকদের সেবা নেয়ার জায়গা। এখানে সেবা নিতে যে কেউ আসতে পারেন, শিক্ষার্থীরাও এসেছিল। আমরা তাদের দাবির কথা শুনেছি এবং কী করা সম্ভব সেটিও জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সুহানকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানাননি।

শেবামেক হাসপাতালের স্টাফের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মহিউদ্দীন রনি থানায় আসলেও তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ করা নাগরিকের অধিকার। তবে তা তদন্ত করা পুলিশের কাজ। তদন্তে যদি রনির সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে শুধু ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার করা যায় না।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে