দীর্ঘদিনের অবহেলা কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন আবারও নতুন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। একসময় আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রস্থল হিসেবে খ্যাত এই ভবনটি অনেক বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। তবে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আংশিক সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের ফলে শিক্ষার্থীদের চোখে ভবনটি আবারও আলোকিত হয়ে উঠছে।
ডাকসু ভবন শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এখানে নেওয়া হয়েছে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, জন্ম নিয়েছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সাহিত্যিক কর্মযজ্ঞ ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের নানা পরিকল্পনা। অথচ ১৯৯০ সালের পর টানা ২৮ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। এরপর নির্বাচন বন্ধ থাকায় এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটি ধীরে ধীরে প্রাণহীন হয়ে পড়ে।
ভবনের ভেতরে ভাঙাচোরা আসবাব, দেয়ালে ছেঁড়া পোস্টার, অচল কক্ষ আর শ্যাওলাধরা দেয়াল শিক্ষার্থীদের হতাশ করত। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত ফি আদায় হলেও তার সঠিক ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর এই অর্থেও ভবনের দেখভালে উদাসীনতা ছিল সুস্পষ্ট।
তবে জুলাই মাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। দেয়ালে রঙ, করিডোর পরিষ্কার, আসবাবপত্র গোছানো, মধুর ক্যান্টিনের আশপাশে পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ ভবনের পরিবেশকে বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও গ্রাফিতি আঁকা ও সাজসজ্জায় সরব ভূমিকা রেখেছেন। তবুও এখনও অনেক কক্ষের দেয়ালে আস্তরণ খসে পড়ছে, কোথাও কোথাও শ্যাওলার দাগ রয়ে গেছে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন আক্তার মনে করেন, ডাকসু ভবন আবারও শিক্ষার্থীদের গৌরবের স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে, তবে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ছাড়া এর প্রাণ ফিরে আসবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া বলেন, আগে যে হতাশা কাজ করত, এখন সেখানে নতুন আশাবাদ জন্ম নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের পর বৃহত্তর সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে। পরিকল্পনায় রয়েছে ভাঙাচোরা আসবাব পরিবর্তন, আধুনিক কনফারেন্স রুম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের স্থান এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ। একইসঙ্গে ঐতিহাসিক পোস্টার, স্লোগান ও ছবিগুলো সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাই মাসে কিছু সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। তবে আসল সংস্কারের জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন, যা নতুন অর্থবছরে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় চায়, ডাকসু ভবন শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয়, বরং কার্যকারিতায়ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক।
আগামী সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে এই ভবনের নতুন সাজ শিক্ষার্থীদের মনে গড়ে তুলছে নতুন প্রত্যাশা। অতীতের গৌরব আর বর্তমানের উদ্দীপনা মিলিয়ে ডাকসু ভবন আবারও হয়ে উঠতে পারে শিক্ষার্থীদের প্রাণকেন্দ্র।