স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ একাধিক দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা মহিপাল ফ্লাইওভারের উত্তরাংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
শহরের হাজারী রোড থেকে পদযাত্রা করে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে এসে অবস্থান নেন। এসময় তারা স্লোগান দেন—“মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন মানি না, মানবো না”, “ভাড়া ক্যাম্পাস শেষ হোক”, “স্থায়ী ক্যাম্পাস মানতে হবে, প্রতারণা ভাঙতে হবে” ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পরিবর্তন।
শিক্ষার্থী মাইশা আক্তার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা এসব দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হলে ইউজিসি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, তখন হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।”
আরেক শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। বৃহস্পতিবার মহাসড়ক অবরোধ তারই অংশ। দ্রুত দাবি মেনে না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অবরোধে আটকে থাকা ট্রাকচালক মো. কাইয়ুম বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে মাল নিয়ে ঢাকার পথে আসছিলাম। মহিপালে এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আটকে আছি।”
এর আগে বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম জামালউদ্দীন আহমদ পদত্যাগ করেন। এরও আগে ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
অবরোধ ঘিরে সকাল থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মিজ ফাতিমা সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরিন কান্তাসহ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, “শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক অবরোধ করেছিল। আমরা এসে তাদের সঙ্গে কথা বলি। পরে তারা সরে দাঁড়িয়েছে এবং একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনায় অংশ নেবে।”
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ১৫ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা ওই বছরের ২১ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।