কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএস এর আওতায় ডিলার নিয়োগের উন্মুক্ত লটারীতে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী হট্টগোলে করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তালিকায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও স্বজনদের নাম থাকার অভিযোগ তুলে এমন হট্টগোলের পর লটারীর কার্যক্রম বয়কট করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) বেলা ১১ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কুমারখালীর আবুল হোসেন তরুন অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লটারী কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার। এ সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোছা. ফাতেমা তুজ জহুরা, উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান, থানা পুলিশ, বিএনপি, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীসহ সকলে অডিটোরিয়াম ত্যাগ করেন।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে ডিলার নিয়োগ না হওয়ায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার অন্তত ১৪ হাজার ৯৯৭ জন ভুক্তভোগী। অথচ অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ১৭ আগষ্ট থেকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএস এর আওতায় উপকার ভোগীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯৯৭ জন। তারা বছরে ৬ বার ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন নিয়োগকৃত ডিলারের মাধ্যমে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৩৩টি এবং একটি পৌরসভায় ৬টিসহ মোট ৩৯টি পয়েন্টে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।
সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় স্থানীয় আবুল হোসেন তরুন অডিটোরিয়ামে ডিলার নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত লটারীর আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। তবে লটারীর কার্যক্রম শুরুর আগেই তালিকায় আওয়ামীলীগ পন্থীদের নাম থাকার অভিযোগ তুলে হট্টগোল শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা দফায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে লটারীর কার্যক্রম স্থগিতের দাবিতে বাগবিতন্ডায় জড়ান এবং লটারী বয়কট করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতন্ডা ও হট্টগোলের পর লটারীর কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে প্রশাসন। ফের যাচাইবাছাইয়ের পর আগামী সোমবার সকাল ১১টায় একই স্থানে উন্মুক্ত লটারীর ঘোষণা দেয় প্রশাসন।
পান্টি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদ অভিযোগ করে বলেন, বারবার অভিযোগ জানানোর পরেও তালিকায় আওয়ামীলীগের দোসরদের নাম রেখেছে প্রশাসনের লোকজন। সেজন্য লটারী বয়কট করেছি। তারভাষ্য, তালিকায় পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদের স্ত্রী জেবুন নাহার বেগমের নাম রয়েছে।
সদকী ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, তালিকা ফের যাচাই বাছাই করে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে ডিলার নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ১৭ আগষ্ট থেকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ডিলার নিয়োগ না হওয়ায় উপজেলার অন্তত ১৪ হাজার ৯৯৭ জন ভুক্তভোগী সুযোগ থেকে বঞ্চিত বলে জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোছা. ফাতেমা তুজ জহুরা। তিনি বলেন, কয়েক দফা যাচাই বাছাই করা হয়েছে। তবুও মনগড়া অভিযোগ তুলে হট্টগোল করছে এক দলের নেতাকর্মীরা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, লটারীর দিনে তালিকায় কিছু নাম নিয়ে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। সেজন্য আজকের লটারী স্থগিত করা হয়েছে। আগামী দুই দিন লিখিত অভিযোগ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আগামী সোমবার সকাল ১১টায় উন্মুতভাবে লটারীর আয়োজন করা হবে।
প্রসঙ্গত এর আগে গত ১৭ জুলাই কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ২১ টি ওয়ার্ডে ও এমএস ডিলার নিয়োগের উন্মুক্ত লটারি অনুষ্ঠান বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পন্ড হয়ে যায়।