মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতার কারণে আবারও রোহিঙ্গারা ভেলায় চড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। সরকারি হিসাবেই এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে, যার বেশির ভাগই ২০১৭ সালের পর। সমপ্রতি আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তে অপেক্ষমান হাজারো রোহিঙ্গা। এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক সংকটের পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে রোহিঙ্গারা এখন তাঁদের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত রোহিঙ্গা জনসংখ্যা স্থানীয় লোকজনকে সেবা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। চুরি, ডাকাতি, মাদকপাচার (বিশেষ করে ইয়াবা) এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং সামগ্রিকভাবে জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রায় আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গারা নিজেরাও নিজ দেশে ফিরে যেতে জাতিসংঘের কাছে তাদের আকুতি প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ তাঁদের সংগঠন কমিটি ফর পিস অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশনের (আরসিপিআর) মাধ্যমে এই প্রত্যাবাসনের ওপরই জোর দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন, যিনি সমপ্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। এই বৈঠক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেবল সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। এটি কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষারও অপরিহার্য অংশ। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সীমাহীন সহমর্মিতা দেখিয়েছে। কিন্তু তারও সীমা আছে। এখন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে এই সমস্যার টেকসই সমাধানে এগিয়ে আসতেই হবে। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত স্থানীয় জনগণকে রোহিঙ্গা বোঝার নিচে চাপা দিয়ে রাখা চলবে না। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় লোকজনের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে এখন নজর দিতে হবে।