হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্দিষ্ট সময়ে চালু না হওয়ায় নতুন করে হাজার কোটি টাকার গচ্চার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টার্মিনালটি চালুর আগেই সেখানে বিপুলসংখ্যক যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেছে। কিছু যন্ত্রপাতির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। আর টার্মিনাল চালুর আগে বাকি যন্ত্রগুলোরও ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যাবে। মূলত দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ওসব যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে ওসব যন্ত্রপাতির জন্যই নতুন করে বিপুল টাকা খরচ করতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু না হলেও আরো আগেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। ওসবের অন-ত ২০ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বাকিগুলোরও ওয়ারেন্টি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ফলে তৈরি হয়েছে যন্ত্রগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত থাকলে শুধু প্রতিস্থাপনের খরচই নয়, আন-র্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে যাত্রীসেবায় বিলম্ব হতে পারে। যা দেশের বিমান চলাচল খাতে আস্থার সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমানে টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হলেও ক্যালিব্রেশন ও টেস্টিং বাকি।
তাছাড়া টার্মিনাল পরিচালনার জন্য কোনো চুক্তি এখনো সম্পাদিত হয়নি। আর ওই চুক্তি হওয়ার পর জনবল নিয়োগের প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধাপে ধাপে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও আংশিক বসানো হয়। সময়মতো কমিশনিং ও পরীক্ষামূলক চালানো জন্য তা করা হয়েছিলো। কিন্তু নানা কারণে কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় যন্ত্রগুলো হয় গুদামে পড়ে আছে, নয়তো চালু হয়নি। তার ফলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ওয়ারেন্টির আওতায় বিনা খরচে মেরামত বা যন্ত্রাংশ বদলের সুযোগ। আগে যন্ত্রপাতির ত্রুটি চুক্তি অনুযায়ী বা বিনা খরচে মেরামত হলেও এখন অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তাতে বেবিচকের বিপুল অঙ্কের অতিরিক্ত ব্যয় হবে।বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োাজাহাজ সংস্থার ১২০ থেকে ১৩০টি উড়োাজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন ওসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। ওই হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে আরো ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, থার্ড টার্মিনালে অব্যবহৃত যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, ব্যাগেজ স্ক্রিনিং সিস্টেম, নিরাপত্তা পরীক্ষার সরঞ্জাম, ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম, ভিজ্যুয়াল ডকিং গাইডেন্স সিস্টেম, কমন ইউজ প্যাসেঞ্জার প্রসেসিং সিস্টেম, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ইন্টিগ্রেটেড বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, টেলিফোন এঙ্চেঞ্জ, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, সিসিটিভি, মাস্টার ইলেকট্রিক ক্লক, ক্যাবল টিভি সিস্টেম, অ্যাঙ্সে কন্ট্রোল, টু-ওয়ে রেডিও, অপটিক ফাইবার ক্যাবল, স্ট্রাকচার্ড ক্যাবলিং ইত্যাদি।
তাছাড়াও স্থাপিত যন্ত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে মেয়াদ শেষ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিষ্কাশন পাম্প, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, নিরাপত্তা অ্যাঙ্সে নিয়ন্ত্রণ, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম ও ল্যান্ডস্কেপিংয়ের। তাছাড়া গ্লেজিং, কম্পোজিট প্যানেল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্টোন, উঁচু মেঝে সিস্টেম, রোলার শাটার, সমপ্রসারণ জয়েন্ট, সিলিং সিস্টেম, সাইনেজ কাজ এবং আলোকসজ্জার মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে। এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের ৯৯.৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণেবেবিচক টার্মিনালটি চালু করতে পারছে না।
আর কবে নাগাদ চালু করা যাবে তাও অনিশ্চিত নয়। ২৪ ঘণ্টা টার্মিনাল সচল রাখতে কমপক্ষে ৬ হাজার জনবল লাগবে। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য অন্তত চার হাজার জনবল দরকার হবে। নিয়োগের পর ওই জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতেও সময় লাগবে। এমন অবস্থায় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে তৃতীয় টার্মিনাল চালুর সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা। এ প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মাহবুব খান জানান, প্রায়শই যন্ত্রপাতিগুলোকে সচল রাখতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। কী পরিমাণ যন্ত্রাংশের মেয়াদ শেষ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল দ্রুত চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
UPEED