প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেতা স্বাধীন খসরু আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। ভিডিওটি প্রকাশিত হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। সাধারণ নেটিজেন থেকে শুরু করে শোবিজ অঙ্গনের শিল্পীরাও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেন স্বাধীন খসরু। এরপর থেকেই সমালোচনার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অনেকে তাকে অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তবে সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু স্পষ্ট করে জানান, স্বাধীন খসরু সংগঠনের সদস্য নন। ফলে তার মন্তব্যের দায় সংঘ নেবে না। তিনি আরও বলেন, “এমন মন্তব্য কোনো শিল্পীর হতে পারে না। শুধু অভিনেতা নয়, কোনো মানুষের কাছেই এমন কথা কাম্য নয়। এর দায় তাঁকেই নিতে হবে।”
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ছোটপর্দার অভিনেতা খায়রুল বাসার লিখেছেন, “একজন অভিনেতা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা বিকারগ্রস্তের মতো কথা বলতে পারেন না। যাঁরা এমন করেন তাঁরা বোধসম্পন্ন মানুষই না! অভিনেতা হিসেবে পরিমিতিবোধ থাকা জরুরি। কথায় পরিমিত ও সংযত হন। আপনি আমাদের দেখা স্বাধীন খসরু নন, আপনি অশ্লীল খসরু।”
অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী ফেসবুকে লিখেছেন, “স্বাধীন নামের একজন পুরুষ শিল্পী একজন নারী উপদেষ্টাকে নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাণিজ্যে নেমেছে। এর মধ্য দিয়ে তার বীভৎস চেহারা আর নোংরা মানসিকতাটা প্রকটভাবে প্রকাশিত হলো।”
অভিনেতা আরশ খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “রাজনৈতিক মতবাদ একজন মানুষের থাকতেই পারে। কিন্তু একজন অভিনেতা হিসেবে ন্যূনতম বোধ থাকা জরুরি। পরিষ্কার মস্তিষ্কের পরিষ্কার ব্যবহার জরুরি।”
এদিকে নেটিজেনদের অনেকে মন্তব্য করেছেন, খসরুর এ ধরনের মন্তব্য শুধু তার ব্যক্তিগত মানসিকতার প্রতিফলন নয়, বরং পুরো শিল্পী সমাজকেই বিব্রত করেছে। শরীফুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধ্বংস হলে মানুষ যা খুশি তাই বলতে থাকে।” আরেকজন নাহিদুর রহমান লিখেছেন, “হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখে আপনাকে যে আসনে বসিয়েছিলাম, সেটার যোগ্য আপনি নন।”
অবশেষে শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চান স্বাধীন খসরু। “অনুশোচনা” শিরোনামে দেওয়া সেই পোস্টে তিনি লেখেন, “আমার ভিডিও পোস্ট নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, তার জন্য দুঃখিত। এখানে কোনো নারী নয়, সমগ্র মানব জাতিকে আমি সম্মান করি। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং এটি ছিল আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”
তবে তার এই ক্ষমা প্রার্থনা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সমালোচকরা বলছেন, একজন শিল্পীর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত, সেখানে এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য পুরো সমাজকে হতাশ করেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন স্বাধীন খসরু। অভিনয় থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকলেও মাঝে মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তিনি আলোচনায় আসেন।