সরকারের প্রায় ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খান সহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
মামলার আসামিরা
১. সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খান
২. বিটিআরসির প্যানেল আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব
৩. বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ
৪. সাবেক কমিশনার (আইন) মো. আমিনুল হক বাবু
৫. সাবেক কমিশনার (স্পেকট্রাম) শেখ রিয়াজ আহমেদ
৬. সাবেক কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী
৭. সাবেক কমিশনার (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) মো. দেলোয়ার হোসাইন
অভিযোগের বিবরণ
দুদকের এজাহারে বলা হয়, বিটিআরসির কয়েকজন কর্মকর্তা ও তাদের প্যানেল আইনজীবীর সহযোগিতায় সামিট কমিউনিকেশনস বেআইনিভাবে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৬টি নতুন শেয়ার ইস্যু করে। এর মধ্যে—
• ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯১১টি শেয়ার দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গ্লোবাল এনারিং-এ, যা আজিজ খান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন।
• ৪ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ১১৯টি শেয়ার দেওয়া হয় মরিশাসভিত্তিক সেকুওয়া ইনফ্রাটেক লিমিটেডকে।
• বাকি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬টি শেয়ার পান পূর্বের শেয়ারহোল্ডার মো. আরিফ আল ইসলাম।
এই শেয়ার ইস্যুর ফলে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫.০৭ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.২৮ কোটিতে। এতে ফরিদ খানের মালিকানা ৯৫ শতাংশ থেকে নেমে আসে ২৫ শতাংশে, আর বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে।
আইন লঙ্ঘন ও রাজস্ব ক্ষতি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্যের ৫.৫ শতাংশ রাজস্ব রাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালে একই আইন প্রয়োগ করা হলেও এই ক্ষেত্রে বিটিআরসির প্যানেল আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সামিট কমিউনিকেশনসকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে মত দেন যে আইনটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এর ভিত্তিতে তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দেন। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যায়নি প্রায় ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
তদন্ত দল
এ ঘটনায় দুদক উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, একই দিনে দুদক নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছে।