চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ৯জন চিকিৎসক দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। সার্জারী ডাক্তার না থাকায় বছরের পর বছর ধরে অপারেশন থিয়েটারে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি। জ্বালানি তেল সরবরাহ না থাকায় ২সপ্তাহ থেকে অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা বন্ধ রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে অন্তঃবিভাগ রোগীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ না থাকায় বাইরে থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় অন্তঃবিভাগ ভর্তি রোগীদের। এ অবস্থায় কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাচোলবাসী। বাধ্য হয়ে বে-সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করে নিঃস্ব হচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি।
নাচোল উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২লক্ষ। এছাড়াও সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিকটবর্তি হওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী নিয়ামতপুর ও গোমস্তাপুর উপজেলার প্রায় ৫০হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ২লক্ষ ৫০হাজার মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এটি। নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আব্দুস সামাদ জানান, বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগ মিলে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০২৪ এর মাঝামাঝি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবণের উন্নয়ন ও শয্যাসংখা বৃদ্ধির পাশাপাশি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন না করায় নাচোলবাসীর চিকিৎসা সেবার কোন উন্নয়ন ঘটেনি। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল কাঠামোতে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আগর্স্ট/২০২৫-এর কর্ম তালিকায় দেখা যায় চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৯জন। তার মধ্যে ডাঃ এ.এফ.এম আজিম আনোয়র সহকারি সার্জন (কোড-১৪১৭৪৯) চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি যোগদান করে লাপাত্তা রয়েছেন। এছাড়াও ৩টি ইউনিয়ন সাবসেন্টারে ৩জন সহকারী সার্জনের পদ থাকলেও ২টি পদ শূন্য রয়েছে এবং একটিতে ডাঃ সাদিয়া রহমান (কোড-১৪৫৮৬৯) যোগদান করলেও তিনি প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নাচোল হাসপাতালে সার্জারী, গাইনী, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন বিভাগ থাকলেও এসব পদে কোন চিকিৎসক নেই। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ, সহকারি নার্স, মেডিক্যাল টেকনলোজিস্ট (ফিজিওথেরাপি), হেল্থ এডুকেটর এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ২৫ জন কর্মচারিও নেই।
এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সর তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অন্তঃবিভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিন্তু অন্তঃবিভাগে রোগী এবং ট্রলী ও হুইলচেয়ার উঠানামার জন্য নেই কোন চলন্ত সিঁড়ি কিম্বা লিফটের ব্যবস্থা। একমাত্র পায়ে হাটাঁ সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ভর্তি হওয়া রোগীদেরকে। যার ফলে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। অপর দিকে জরুরী উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালের রোগী স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে মাত্র ১টি। তাও আবার জ্বালানি তেল সরবরাহ না থাকায় ২সপ্্তাহ ধরে অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা বন্ধ রয়েছে। এব্যাপারে মেসার্স হোসেন পেট্টোলিয়ামের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের বলেন, গত বছর মে থেকে চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের নিকট জ্বালানী তেল সরবরাহ বাবদ ১৭ লক্ষ ৮৫হাজার ৮৩ টাকা বকেয়া রয়েছে। তিনি আরও বলেন কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদাপত্র দেয়া হলেও বকেয়া পরিশোধ না করায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাচোলের মানুষ। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালের বিদ্যমান সংকট উত্তরণে চেষ্টা চালিয়ে যাব।
এ অবস্থায় নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো এবং ডায়াগনস্টিক বিভাগের আধুনিকীকরণসহ অপারেশন থিয়েটার চালুর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন নাচোলবাসী।