ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে। একই সময়ে অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন আরও তিনজন। বুধবার (২৭ আগস্ট) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা নগরীতে আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। পুরো মহল্লা-মহল্লা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, ফলে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো আর কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে না। এর মধ্যেই ইসরায়েলের অবরোধ সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
মঙ্গলবার গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চলের একটি জনবহুল বাজারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। আল-আহলি আরব হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুইজন নারী ছিলেন।
আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তর গাজার আস-সাফতাওয়ি এলাকা থেকে মানুষ জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোর করে দক্ষিণের তথাকথিত ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তায় নারী-পুরুষ-শিশুরা সারি বেঁধে হাঁটছে— কারও হাতে ব্যাগ বা কম্বল, কেউ ঠেলাগাড়িতে সামান্য জিনিস বহন করছে, আবার কেউ ছোট বাচ্চাদের হাত ধরে এগোচ্ছে।
প্যালেস্টাইনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ৬ আগস্ট থেকে চলমান অভিযানে গাজার জায়তুন ও সাবরা এলাকায় এক হাজারেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা নগরীর বাসিন্দা ও লেখক সারা আওয়াদ বলেন, প্রতিদিন ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে— ঘরে থেকে বোমাবর্ষণের ঝুঁকি নেবে নাকি আবারও বাস্তুচ্যুত হবে। তার ভাষায়, “আমার ঘর তো এখানেই, তাহলে কেন আমাকে পালিয়ে গিয়ে তাঁবুতে থাকতে হবে? এখন মনে হচ্ছে আমরা জীবনের শেষ দিনগুলো পার করছি।”
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ১৩ জন নিহত হন সহায়তা সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত জিএইচএফ গত মে মাসে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সহায়তা নিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর (ওসিএইচএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে— গাজায় ক্ষুধা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে এবং জরুরি সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছেন আরও তিনজন। ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৩ জনে, যার মধ্যে ১১৭ জনই শিশু।