গাজায় লাইভ সম্প্রচারের সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের অভিজ্ঞ সাংবাদিক হুসাম আল-মাসরি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের সামনে সরাসরি সম্প্রচারের সময় এ ঘটনা ঘটে।
৪৯ বছর বয়সী হুসাম আল-মাসরি দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বেসামরিক মানুষের দুর্দশা তুলে ধরছিলেন। অথচ নিজেই একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে পরিবারকে খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সহকর্মীদের মতে, ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তার সাহস, পেশাদারিত্ব ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে গাজার সাংবাদিক সমাজে বিশেষভাবে প্রিয় করে তুলেছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার সময় মাসরি যে লাইভ ভিডিও ফিড পরিচালনা করছিলেন, তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য দাবি করেছে, সাংবাদিকরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না। তাদের বক্তব্যে বলা হয়, ওই হামলা চালানো হয়েছিল হামাসের নজরদারি ক্যামেরা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। তবে হামলায় রয়টার্স ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)–এর সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন প্রাণ হারান।
সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি রয়টার্সকে বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে রয়টার্স এবং এপি সাংবাদিকরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না।” তিনি আরও জানান, হামলার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। এর মধ্যে অনুমোদন প্রক্রিয়া, ব্যবহৃত গোলাবারুদ ও হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধাপগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
পরবর্তীতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ছয়জন নিহত ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করে, যাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। তবে তাদের মধ্যে কেউই সাংবাদিক ছিলেন না। বিবৃতিতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করে সেনাবাহিনী।
হুসাম আল-মাসরির মৃত্যুর পর তার ভাই এজেলদিন আল-মাসরি তার ব্যবহৃত ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম হাতে তুলে নেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, হুসামের শেষ সংবাদ ছিল গাজার মানুষের দুর্দশার কথা, যা তিনি নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যেই বিশ্বকে জানিয়ে গেছেন।