যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রম শুরু করছে নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রম শুরু করছে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগকে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডার মায়ামি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং এনআইডি মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর নেতৃত্বে দুটি প্রশাসনিক টিম যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবে। আখতার হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে অবস্থান করবে, আর হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বাধীন দল মায়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করবে। তারা দেশ ছাড়বেন ১৯ সেপ্টেম্বর এবং ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসবেন। মূল কার্যক্রম চলবে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পের সহায়তায় চারটি কারিগরি টিমও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। প্রতিটি টিমে চারজন করে কর্মকর্তা থাকবেন, যারা  ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন। এই টিমগুলো ১২ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগ করে ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন। সমস্ত ব্যয় বহন করবে আইডিইএ-২ স্মার্টকার্ড প্রকল্প।

ইসি জানায়, প্রবাসীদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরতরা অধিকাংশ স্থায়ী। অনেকে এনআইডি কার্যক্রম দেশে চালু হওয়ার আগে দেশটিতে গেছেন। ফলে তারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল পাননি এবং বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশাল দেশ এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের সুবিধার্থে চারটি অঙ্গরাজ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বর্তমানে ইসি দশটি দেশে ১৭টি স্টেশনে প্রবাসী ভোটার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডান ও মালদ্বীপেও ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি পাওয়া গেছে।

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের অগ্রগতি:

চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৯,৫৭৪টি আবেদন জমা পড়েছে।

এর মধ্যে ২৯,৭৬৩ জন দশ আঙ্গুলের ছাপসহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।

২১,৯৭১ জন আবেদন অনুমোদিত ও ভোটার হয়েছেন।

১৮,০৩৪ জন তথ্য সার্ভারে আপলোড হয়েছে।

৩,৯৩৭ জন আবেদন এখনো আপলোডের অপেক্ষায়। সমান সংখ্যক আবেদন বাতিলও হয়েছে।

ভোটার হওয়ার জন্য প্রবাসীদের অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের সঙ্গে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, এনআইডি প্রত্যায়ন, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এবং পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ৫৬টি উপজেলা/থানার জন্য অতিরিক্ত নথি প্রদান বাধ্যতামূলক। প্রবাসীরা দেশে না থেকে এ তথ্য জমা দিতে পারেন আত্মীয়দের মাধ্যমে। সকল তথ্য সঠিক হলে আবেদন অনুমোদিত হয়ে ভোটার হিসেবে যুক্ত করা হয় এবং এনআইডি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হয়।

২০১৯ সালে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে প্রবাসী ভোটার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে অনলাইন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়। করোনা মহামারির কারণে কিছু কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও পরবর্তী কমিশন এটি পুনরায় চালু করেছেন।

বিশ্বজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন, যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী সৌদি আরবে (৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন) এবং সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে (২,৫০০ জন) অবস্থান করছেন। কমিশন এই দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভোটার কার্যক্রম ও এনআইডি প্রদানের কাজ চালাবে।

এনআইডি মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, আগামী মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম শুরু সম্ভব হবে এবং ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডান ও মালদ্বীপেও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে