শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষে সফলতা

এফএনএস (আতাউর রহমান কাজল; শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার) : | প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষে সফলতা

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বস্তায় আদা চাষ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিতে পতিত জমি, বাড়ির ছাদ বা উঠানকে কাজে লাগানো যায়। ফলে একদিকে যেমন চাষের খরচ কম, অন্যদিকে রোগবালাইয়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম হয়। এর ফলে কৃষকেরা স্বল্প ব্যয়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন।

বাংলাদেশে মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদার রয়েছে বিশেষ চাহিদা। রান্নার অপরিহার্য উপকরণ হওয়ার পাশাপাশি ওষুধি গুণেও আদা সুপরিচিত। কিন্তু দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আদা আমদানি করতে হয়। এ অবস্থায় শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বস্তায় আদা চাষ। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হওয়া এ পদ্ধতি ইতিমধ্যে কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, এই পদ্ধতিতে প্রথমে মাটি, জৈব সার ও বালি মিশিয়ে বস্তা ভর্তি করা হয়। পরে বস্তায় আদার কন্দ রোপণ করা হয়। সঠিক পরিচর্যায় ৮-৯ মাসের মধ্যেই বস্তা থেকে আদা সংগ্রহ করা যায়। উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। প্রতি বস্তায় গড়ে ৭৫০ গ্রাম আদা উৎপাদন হলে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার আদা বিক্রি সম্ভব হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।

উপজেলার মোহাজিরাবাদ, খলিলপুর, আশীদ্রোন, পারের টং, মাজদিহি ও রাধানগর গ্রামে এই বস্তাভিত্তিক আদা চাষ বেশি হচ্ছে। প্রায় ২৫-৩০ জন কৃষক এ উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হবে ৮ থেকে ৯ টন।

মাজদিহি গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন এ বিষয়ে বলেন- ‘আমি এবার ৫২৫ বস্তায় আদা চাষ করেছি। এর মধ্যে ৫০০ বস্তা কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শণী প্লট হিসেবে সহায়তা পেয়েছি। সার হিসেবে জৈব সার, জিপসাম সার, ইউরিয়া ও টিএসপি দেওয়া হয়েছে। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আশা করছি এসব বস্তা থেকে ভালো আয় করতে পারব।’

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুমা পাল বলেন, ‘এই চাষপদ্ধতি কৃষকদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হবে ৮ থেকে ৯ টন। কৃষকরা উৎসাহিত হলে শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষ আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে।’

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান,  বস্তায় আদা চাষ শুধুমাত্র গ্রামীণ পর্যায়ে নয়, শহরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হতে পারে। কারণ এতে ছাদ বা ছোট পরিসরের অব্যবহৃত জায়গা ব্যবহার করে কৃষকরা বাড়তি আয় করতে পারবেন। এতে স্থানীয় বাজারে আদার চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে।

কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪-৫ লাখ মেট্রিক টন আদার চাহিদা রয়েছে, কিন্তু উৎপাদন হয় এর চেয়ে অনেক কম। ফলে প্রতিবছর ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আদা আমদানি করতে হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, যদি বস্তায় আদা চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে দেশের আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি যাতে তারা পতিত জমি বা ছোট জায়গা কাজে লাগায়। বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষ ইতিমধ্যে একটি সফল মডেল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। কৃষি অফিসের পরিকল্পিত উদ্যোগ, কৃষকদের পরিশ্রম এবং সরকারি সহায়তা মিলেই এ সাফল্যের গল্প রচিত হচ্ছে। আগামী দিনে এই মডেল শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ আদা উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে পারবে-এমনটাই আশা কৃষি বিশেষজ্ঞদের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে