বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অলাভজনক ও অকার্যকর স্থলবন্দরগুলোর বিষয়ে দীর্ঘদিনের আলোচনার পর অবশেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে সরকার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ ঘোষণা এবং একটি স্থলবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৪০তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর এবং রাঙামাটির পার্বত্য জেলার তেগামুখ স্থলবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা স্থলবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশজুড়ে স্থলবন্দরগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর তিনি অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দরগুলো যাচাই করে সুপারিশ করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন।
এই কমিটিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ছয় সদস্যের ওই কমিটি গত ৬ নভেম্বর আটটি স্থলবন্দর পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনায় চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ এবং তেগামুখ স্থলবন্দর কার্যকর নয় এবং এগুলো চালুর জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, বাল্লা স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে ভারতীয় অংশে সড়ক ও অবকাঠামো না থাকায় কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। সে কারণে এটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার সুপারিশ করা হয়।
সরকারি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সীমান্ত বাণিজ্যের কাঠামোয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অলাভজনক অবস্থায় পড়ে থাকা স্থলবন্দরগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বাড়তি ব্যয় থেকে সরকার মুক্তি পাবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে সীমান্ত বাণিজ্য নির্ভর মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।