নোয়াখালীর সেনবাগে বাল্যবিবাহ বন্ধে কিশোরী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে সম্ভাবনার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে বাল্যবিবাহকে না বলে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবা দুপুরে সেনবাগ উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের হল রুমে উপজেলা মডেল মসজিদের নিচ তলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতিসংঘ জনসংখ্য তহবিল ইউএনএফপি ও এনজিও সাগরিকা উন্নয়ন সংস্থার যৌথ আয়োজনে ওই সম্ভাবনার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আয়োজকদের পদচারণায় মুখরিত হয় সম্ভাবনার উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসবে আসা চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম কর্মী, শিক্ষা, মৎস্য, কৃষি, খেলাধুলা, ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল গেমিংসহ বিভিন্ন খাতের ৯টি স্থান পায়। উৎসবে আগত ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক,শিক্ষক ও পেশাজীবীরা প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে বাল্যবিবাহের কুফল ও সফল মানুষ হওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন। ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ না করে সফল মানুষ হওয়ার অঙ্গীকার করেন উৎসবে আগত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদেরকে বাল্যবিবাহের কুফল ও পুলিশ, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানান পেশাজীবীরা। সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এসএম মিজানুর রহমানের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনের শিক্ষাথীসহ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত লোকজন।
ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ড. সাদিয়া সারমিন রিদি, মহিল া বিষয়ক অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপপরিচালক কামরুন নাহার, নোয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সেনবাগ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল করিম, সেনবাগ ঊপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাদিয়া আফরোজ ,
সেনবাগ থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) এসএম মিজানুর রহমান,সেনবাগ উপজেলা মাধ্যমি শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলী, সেনবাগ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দিন,সেনবাগ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা খোরশেদ ইসলাম ,অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন,সেনবাগ উপজেল ামহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শম্পা কর।
সেনবাগের তিনটি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত ১৫০ ছাত্রী, ৮০ছাত্র ও ৩৫জন অভিভাবক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহন করে।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলেন, এ ধরনের উৎসবে আসার সুযোগ আমাদের খুবই কম। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। বাল্যবিবাহের যেসব ক্ষতিকর দিক এবং বাল্যবিবাহ কীভাবে একটি মেয়ে ও তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় সে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তা ছাড়া মাধ্যমিক শেষ করার পরে উচ্চ শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছি। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, আমার বন্ধুদেরও বিষয়টি জানাতে পারব।
নিজের মেয়েকে নিয়ে আসা আব্দুল কাদের নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়ের বিয়ের জন্য এখনই অনেকে প্রস্তাব দিচ্ছে। এখানে এসে মেয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা পেলাম। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সব ধরনের চেষ্টা করার অঙ্গীকার করেন এই অভিভাবক। উৎসবে আগত শিক্ষার্থীরা সাদা দেওয়ালে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা লিখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপপরিচালক কামরুন নাহার বলেন, বাল্যবিবাহে ঝুঁকিপূর্ণ সারা দেশের মতো নোয়াখালী জেলার মধ্যে সেনবাগও রয়েছে। এখানে জেলার ৯টি উপজেলা ও একটি পৌরসভা এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। উৎসবেআগত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কুইজে অঙশ গ্রহন করে। শেষে ৭ কুইজ বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।