মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মদনমোহনপুর চা বাগানে স্বামী ও তার পরকিয়া প্রেমিকার নির্যাতনের বলি হয়ে ২ সন্তানের জননি স্বরস্ততি রবিদাস (২৬) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বিশ্বজিত ও তার পরকিয়া প্রেমিকা মুন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে থানার পুলিশ।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মাধবপুর ইউনিয়নের মদনমোহনপুর চা বাগানের গাঙ্গ লাইনের শ্রমিক পাড়া এলাকার চা শ্রমিক মৃত হরিদাস এর ছেলে বিশ্বজিত দাস পারিবারিকভাবে অনুষ্টানের মাধ্যমে একই উপজেলার দলই চা বাগানের গগন রবি দাসের মেয়ে স্বরস্ততি রবিদাস (২৬) কে প্রায় ৬ বছর পূর্বে বিয়ে করে। তাদের ৬ বছরের সংসার জীবনে ২ বছরের এক ছেলে ও ৬ মাস বয়সের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত স্বরস্ততির মা কমলা রবিদাস, বড় বোন সুনিতা রবিদাস ও চাচাতো ভাই শিমুল রবিদাস জানান, তাদের সংসার জীবন ভালভাবেই চলার এক পর্যায়ে বিশ্বজিত দাস মাধবপুর চা বাগানের গোপাল বুনার্জীর স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী মুন্নী বুনার্জীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে গত মে (২৫ইং) মাসে পরকিয়া প্রেমিকা মুন্নী বুনার্জীকে সামাজিকভাবে বিবাহ বহিভুর্তভাবে বিশ্বজিতের মদনমোহনপুর চা বাগানস্থ বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে একই বাড়ীতে বিশ্বজিত ও তার ১ম স্ত্রী ও তাদের সন্তানসহ পরকিয়া প্রেমিকাকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে। বসবাসকালীন সময়ে বিশ্বজিত ও তার প্রেমিকা মুন্নি বুনার্জী বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে স্বরস্ততিকে নির্যাতন করতো।
স্বরস্বতির মা কমলা রবিদাস আরো বলেন, গত বুধবার (২৭ আগষ্ট) রাতে বিশ্বজিত ও তার প্রেমিকা মুন্নি বুনার্জী নির্যাতন করে মুমুর্ষ অবস্থায় স্বরসতিকে (স্বরসতির) বাবার বাড়ী দলই চা বাগানে নিয়ে আসে। এসময় বিশ্বজিত বলেন, তার মেয়েকে নিয়ে আর সংসার করবে না। স্বরসতির মা কমলা মেয়ের জামাই বিশ্বজিত বুঝিয়ে রাত্রিতে তার বাড়ীতে রেখে দেন। এদিকে বৃহস্পতিবার (২৮ আগষ্ট) সকালে বিশ্বজিত একাই মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য স্বরসতিকে নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। বিশ্বজিত স্বরস্বতীকে চিকিৎসার জন্য অন্য কোন হাসপাতালে না নিয়ে মদনমোহনপুর চা বাগানের গাঙ্গ লাইনের শ্রমিক পাড়া এলাকার তার বাড়ীতে নিয়ে গেলে বিকাল সাড়ে ৩টায় স্বরস্বতী মারা যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ওসি শামীম আকনজি সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করে। এই সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৃতের স্বামী ও প্রেমিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
মাধবপুর ইউপি সদস্য মোতাহের আলী ও ইউপি সদস্যা মালতি রানী বুনার্জী বলেন, স্বরসতি ও বিশ্বজিতের বিবাহ সামাজিকভাবেই হয়েছে। পরে আর কোন বিয়ের খবর পাইনি। তবে বিশ্বজিতের চরিত্র ভাল ছিল না।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদও হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। মামলা হলে তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।