রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধান না থাকায় বাংলাদেশের ‘কঠিনতম সংকট’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:১১ পিএম
রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধান না থাকায় বাংলাদেশের ‘কঠিনতম সংকট’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শুক্রবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা বলরুমে আয়োজিত ‘বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স ২০২৫’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বললেন, “বাংলাদেশের সামনে কঠিনতম সঙ্কট হলো, রোহিঙ্গা সমস্যার সম্ভাব্য কোনো সমাধান আমাদের হাতে নেই। যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কেননা এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে শিশু-তরুণের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এই পরবর্তী প্রজন্ম ইতোমধ্যেই বড় হতে শুরু করেছে। তারা আদৌ আর আশ্রয়-ক্যাম্পের জীবনে থাকতে চাইবে না। তারা বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মেনে নেবে কিনা- সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা এতোটাই প্রকট হতে যাচ্ছে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো আঞ্চলিক এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।”

মো. তৌহিদ হোসেন আরও যোগ করে বলেন, “যখন আমাদের ভূমিতে রোহিঙ্গা প্রবেশ শুরু হলো, তখন আমি নিজেও দায়িত্বপ্রাপ্ত একটা জায়গাতে ছিলাম। সবাই ভেবেছিল, এটা সাময়িক সমস্যা। একমাত্র আমি বলেছিলাম, ‘যত দিন যাবে, এই সংকট দীর্ঘায়িত হবে।’ কেননা তাতমাদোর লক্ষ্যই হলো- মিয়ানমারকে সম্পূর্ণভাবে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা। সেজন্য প্রত্যর্পণের সুযোগ কোথায়? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব-রাজনীতির চিত্রপট খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো আরও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন খুবই কাঠামোগত পদ্ধতিতে হচ্ছে, তেমনি ইরানে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আক্রমণের মতো হুটহাট যুদ্ধাবস্থারও সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের পেছনে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার। আবার আমরা দেখলাম, বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ভারত-আমেরিকার মধ্যে একটা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, যেমন-কোয়াডের মতো সংগঠন। আবার বাণিজ্যে একটা সুবিধাজনক স্থিতিশীল সম্পর্কও ছিল। কিন্তু হুট করে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে এখন ভারত-চীন একই ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে। এটার ফলে এশিয়ার আরও শক্তিশালী হবার সুযোগ তৈরি হলো।”

‘সব সংকটের পরেও আমি বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হতে চাই। কেননা বর্তমান তরুণ নেতৃত্ব ২০২৪ সালের জুলাইতে যেভাবে ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, তাতে ইতিবাচক হওয়াই যায়। যদিও ১৯৯০ সালেও গণতন্ত্রের ভালো সুযোগ এসেছিল, যে সুযোগ আমরা ক্ষমতা পেতে না পেতেই হারিয়েছি। তবে তরুণেরা ভুল করতে করতে শেখে সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমি দেখি, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশে আমরা ভিশনারি রাজনীতি দেখতে পাবো। সেজন্যই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘ভালো কর্মী’ হিসেবে গড়ার উদ্যোগ অপরিহার্য। যেখানে যথাযথ জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি নানান দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকবে’-যোগ করেন তিনি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে