পানি কমার সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার পাড়। চাপ চাপ মাটি ধসে দীর্ঘ হচ্ছে ভাঙনের চিত্র। মূহুতের মধ্যে প্রায় ১০০ মিটার এলাকার ৮টি আম ও ৫টি মেহগনি গাছসহ আলী হোসেন ও আলী ফকিরের বাড়ি ভাঙনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৮ আগষ্ট) রাত ১০টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তরে কালিদাসখালী এলকায়। এরপর তারা আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। হুমকিতে রয়েছে আরো ২০-২৫টি বাড়ি।
জানা গেছে, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং হুমকির মধ্যে রয়েছেন আলাল কাজী, মেহেদী জামালসহ ২০-২৫টি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। এবার যে সমস্ত জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তার সিংহ ভাগ জমিতে ছিল আম, মেহগনি গাছ ও বাড়িঘর। এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। এরমধ্যে নদী ভাঙ্গনের কারনে ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবার বিভিন্নস্থানে চলে গেছে।
৩ নম্বর কালিদাসখালী চরের ও চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেকের বাড়ি ও আম বাগান নদীগর্ভে ইতিমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। অনেকেই হুমকির মধ্যে রয়েছে। এবার যে ভঙনের ডাক তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর বলে কোন চিহৃ থাকবেনা।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর ফজলুল হক বলেন, চকরাজাপুর বলে কোন চিহৃ নেই। ইতিমধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। এবাব যেহারে ভাঙা শুরু হয়েছে, এভাবে ভাঙনে থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে এ ওয়ার্ডও বিলিন হয়ে যাবে।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আনোয়ার শিকদার বলেন, আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের কোন চিহৃ নেই। এই ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার দুই বছরের ব্যবধানে অন্যত্রে চলে গেছে।
কালিদাসখালী চরে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া আলী হোসেন ও আলী ফকির বলেন, বাড়ি করা যে জমি ছিল তাও ভাঙনে চলে গেল। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কী করে চলবো, কথায় যাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। যাওয়ার কোন জায়গা নেই। ঘর তোলার জমিও নেই, টাকাও নেই। বাড়ি মূহুতের মধ্যে ভেঙে যাওয়ায় কিছু নেয়াও সম্ভব হয়নি। সব পদ্মা গর্ভে চলে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। তবে বর্তমানের ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনের খবর পেয়েছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।