ব্রহ্মপুত্র তীরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সাহেবেরচর গ্রাম

এফএনএস (উজ্জ্বল কুমার সরকার; হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ) : | প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ০২:১১ পিএম
ব্রহ্মপুত্র তীরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সাহেবেরচর গ্রাম

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যুগে যুগে ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় জয় করেছে। নদীমাতৃক এই দেশের প্রতিটি নদীর তীরজুড়ে ছড়িয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্য। কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত সাহেবের চর সেই সৌন্দর্যেরই এক অনন্য নিদর্শন। এই চরকে কেন্দ্র করে যদি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো যায়, তাহলে বদলে যেতে পারে পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক অবকাঠামো।

সাহেবের চর ঘিরে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। একদিকে প্রতিরক্ষা বাঁধ, অন্যদিকে বিস্তীর্ণ কাশবন, চারপাশে সবুজ শস্যক্ষেত এবং মাঝখানে উদ্ভূত ‘আল-কুবা নতুন চর’ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক খোলা জানালা। শীতকালে এখানে নদীর স্বচ্ছ জল, ঢেউয়ের আছড়ে পড়া শব্দ আর স্নিগ্ধ বাতাস পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের জন্য এটি হতে পারে এক অপার্থিব অভিজ্ঞতার স্থান।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প ইতোমধ্যেই অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। সাহেবের চরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দেরও। কৃষক আবদুল হান্নান বলেন, “যদি এখানে সরকারি উদ্যোগে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠে, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হবে। গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।” বর্তমানে চরটির মানুষের জীবিকা মূলত কৃষি, মাছধরা এবং নৌ-পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলে মাগুর, রুই, কাতলা, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাচুর্য রয়েছে, যা মাছ ধরার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বেসরকারি বিনিয়োগের সমন্বয়ে সাহেবের চরকে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, অবকাশযাপন স্পট এবং নৌভ্রমণ সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন এলাকায় রূপ দেওয়া সম্ভব। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

একসময় সাহেবের চর ছিল নদীভাঙন ও অনিশ্চয়তার প্রতীক। বহু পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরে এসে বসতি স্থাপন করে নতুন গ্রাম গড়ে তুলেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আল-কুবা নতুন চর’। বর্তমানে এই গ্রামের মানুষ আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় পর্যটকদের মন জয় করছে।

স্থানীয় যুবক মাহফুজ রাজা বলেন, আগে এই চরকে অনেকে ভয় পেত। এখন সারা বছর অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসে। আমরা চাই সরকার যদি সামান্য উন্নয়ন করে, তাহলে সাহেবের চর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের একটি বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।

দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো রকিবুল ইসলাম জানান,সাহেবের চর অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। এখানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক এনামুল হক বলেন, বাংলাদেশে নদীকে ঘিরে পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সাহেবের চরের মতো স্থানগুলো যদি সঠিকভাবে পরিকল্পিত হয়, তাহলে তা শুধু স্থানীয় অর্থনীতিই নয়, জাতীয় পর্যটন শিল্পেও অবদান রাখবে।সঠিক উদ্যোগ, বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাহেবের চর হতে পারে ব্রহ্মপুত্রের তীরে একটি আদর্শ নদীভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি হোসেনপুর তথা কিশোরগঞ্জের সামাজিক-অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিতে সক্ষম।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে