ডাকসু নির্বাচন: ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:২৭ পিএম
ডাকসু নির্বাচন: ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী আশরেফা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারের প্রথম অংশে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় রাজনীতির মহড়া, অস্ত্রের ঝনঝনানি ও ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জীবন, জ্ঞান, দক্ষতা ও সেবাভিত্তিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। হল ও একাডেমিক অঙ্গনে দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো অবসান ঘটানো হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের ওপর চলা নির্যাতন ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মতো আন্দোলনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রক্ষা করা হবে।”

একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্যানেলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন কার্যকর করার লক্ষ্যে ’৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভিসি, প্রোভিসি ও প্রভোস্টসহ প্রশাসনিক পদগুলিতে স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগ প্রণয়ন, ওয়ান স্টপ সলিউশন অ্যাপস চালু করে ভর্তি, রেজাল্ট, বেতন ও অন্যান্য সেবা অনলাইনে প্রদান, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্প্রসারণ এবং আধুনিক ক্লাসরুম ও ল্যাব নিশ্চিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০তলা বিশিষ্ট স্টাডি স্পেস নির্মাণ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ ডিগ্রি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষকদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া দলীয় প্রভাবমুক্ত হবে এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।

স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার কার্যক্রমের মধ্যে ‘ওয়ান কার্ড অল সার্ভিস’, ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান সিট’, স্বাস্থ্যবিমা, মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন ও ট্রমা সেন্টার চালু এবং শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ নিশ্চিতে সুদবিহীন লোনের ব্যবস্থা করা হবে। ভিন্ন ধর্ম, জাতি ও মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য ও পোশাক সংক্রান্ত আঞ্চলিক কেন্দ্রিক পলিসিং বন্ধ করা হবে।

ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় পুরো ক্যাম্পাসে উচ্চগতির স্টারলিং ইন্টারনেট, সব একাডেমিক ভবন ও হলে ফ্রি ও ফাস্ট ইন্টারনেট এবং পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ চক্রাকার বাস সার্ভিস নিশ্চিত করা হবে। খাবার ও ক্যান্টিনে সাশ্রয়ী মানোন্নয়ন, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও ই-লাইব্রেরি চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

ক্যারিয়ার ও স্কিল ডেভেলপমেন্টে কেন্দ্রীয় ক্যারিয়ার ক্লাব, পার্টটাইম চাকরির ব্যবস্থা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং বেসিক স্কিল কোর্সের আয়োজন করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিজনেস ও উদ্যোক্তা হাব স্থাপন করা হবে।

কালচারাল ও স্পোর্টস ক্ষেত্রে মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টার, মিনি ডিয়েটার, আধুনিক গেইমসরুম, জিমনেসিয়াম ও হালভিত্তিক খেলার মাঠ সংস্কার এবং ক্লাবগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নারীদের জন্য স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধি, নামাজের স্থান সম্প্রসারণ, অনাবাসিক মেয়েদের হলে প্রবেশাধিকার, সাইবার সিকিউরিটি সেল এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রোধে সমতা নিশ্চয়ন কমিটি গঠন করা হবে।

আইনি সহায়তার আওতায় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের জন্য ‘লিগ্যাল সাপোর্ট সার্ভিস’ চালু করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে