মন্ত্রণালয়ের ভুয়া প্রজ্ঞাপন বানানো বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামের জহুর আলী সরদারের ছেলে প্রতারক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন-উল ইসলাম বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশসহ পাঁচটি ধারায় অপরাধ সংঘটনের দায়ে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন বরিশাল অঞ্চলের পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক। মামলার পর অভিযান চালিয়ে প্রতারক মিজানুর রহমানকে মাধবপাশা থেকে প্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান স্থানীয় লোকজনের সাথে প্রতারনা করে লাভবান হওয়ার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সরকারি প্রজ্ঞাপন বানিয়েছিলো বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্রমতে, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের নেতা বনে যান মিজানুর রহমান। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তিনি ছিলেন পদহীন যুবলীগ নেতা। এরপর সরকার পতনের পর বিএনপির কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় তিনি বিএনপি নেতা বসে যায়। সুইডেন এবং স্পেনের দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় শিল্পাঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। সেই শিল্পাঞ্চল নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ও জনবল নিয়োগসহ সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য এইচআর (হিউম্যান রিসোর্স) বিভাগের প্রধান হিসেবে মিজানুর রহমানকে নিয়োগ করেছে সরকার। এমন প্রচারনার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের চিঠি বানিয়ে তিনি (মিজানুর) নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন। একপর্যায়ে সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে পৌঁছে যায় পাট অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের কাছে। এরপরেই ফাঁস হয়ে যায় মিজানুর রহমানের ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পাতার গল্প।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতারক মিজানুর রহমানের সুপরিকল্পিত প্রতারণার ফাঁদ শুরুতেই ধরা না পরলে শিল্পাঞ্চল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ এবং জনবল নিয়োগের নামে সর্বস্বান্ত করা হতো মাধবপাশা এলাকার শত শত মানুষকে।'
বরিশাল অঞ্চলের পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, গত ২৮ আগস্ট সকালে পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে ফোন করে এই প্রতারণার ঘটনাটি জানিয়ে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নিতে বলেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল মাধবপাশা বাজারে গিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারক ব্যক্তির নাম ও পরিচয় নিশ্চিত হই।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হয় প্রতারক মিজানুর রহমান মাধবপাশা এলাকার স্থানীয় জনগণের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যেই সরকারি ওই ভুয়া প্রজ্ঞাপন সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাদের নির্দেশে নিকটস্থ এয়ারপোর্ট থানায় প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় বরিশালের সুরভী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন মিজানুর রহমান। সেখানে নানান অভিযোগ আলোচিত ও সমালোচিত হওয়ার পর তিনি চাকরিচ্যুত হন। এরপর প্রামের বাড়ি মাধবপাশায় এসে তিনি বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে নিজেকে একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিতি লাভে মনোযোগী হন।