রাজশাহীর বিএনপিতে আবার কোন্দল, সংঘাতের শঙ্কায় পাঁচ নেতাকে শোকজ

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ৩১ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম
রাজশাহীর বিএনপিতে আবার কোন্দল, সংঘাতের শঙ্কায় পাঁচ নেতাকে শোকজ
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে রাজশাহী জেলা বিএনপি ও অধীন বিভিন্ন উপজেলা-পৌর এলাকায় কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভা করায় রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতিসহ পাঁচজন পদধারী নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। অন্যদিকে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রস্তুতি সভায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় পাল্টা-পাল্টি মামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিএনপির একাধিক গ্রুপ পৃথকভাবে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে সংঘাতের আশঙ্কা বিরাজ করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ছয় বছর ধরে বিএনপির রাজশাহী জেলা ও অধীন ১৪ পৌরসভা, ৯ উপজেলা ও ৭২টি ইউনিয়নে নিয়মিত কোন কমিটি নেই। দলটির এসব বড় ছোট সাংগঠনিক ইউনিট চলছে শুধুমাত্র আংশিক আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ মুষ্টিমেয় কিছু নেতা দলের এসব ইউনিটে পদ বাগিয়ে নিয়ে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে প্রভাব চর্চা করছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকাতে শত শত ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মী সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে। তাদের আরও অভিযোগ সংগঠনের বাইরে থাকায় পদ বঞ্চিতরা দলে অবদান রাখার কোন সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা নিজেদের মতো দলীয় কার্যক্রম করতে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছেন। কয়েক মাস আগে দলীয় কোন্দলের জেরে তানোরে দুই বিএনপি নেতা নিহত হয়েছে বিপরীত গ্রুপের হাতে। হালে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে বিএনপির কোন্দল আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট রাতে নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলটির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু। তপুর ডাকা এ সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সাবেক এমপি জাহান পান্না, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক তাজ মুলতান টুটুল, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আমিনুল হক, আড়ানী পৌর বিএনপির সভাপতি বজলুর রহমান, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, কেশরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন আলো, মোহনপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামিমুল ইসলাম মুন, নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ৩৫ পদধারী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা বের করা হবে। এদিকে এই সভার খবর জানতে পেরে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ শনিবার রাতে সাবেক সভাপতিসহ পাঁচ নেতাকে শোকজ করেন। ৩০ আগস্ট রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশে সংশ্লিষ্টদের আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজ নোটিশে বলা হয়, আপনাদের এই ধরণের দলীয় কর্মকাণ্ড সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন জেলা বিএনপির কোন কমিটি নেই। গত ১০ আগস্ট রাজশাহীতে বিএনপির সম্মেলন শেষে মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সঙ্গে রাজশাহী জেলা বিএনপির নতুন কমিটি দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। তপু আরও বলেন, সম্প্রতি অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের ঢাকার বাসায় আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা ৩০ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলাম। সেখানে তিনি আমাদের বলেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির এখন কোন কমিটি নেই। জেলা বিএনপির প্যাডে আমাদেরকে শোকজ দিতে পারেন না তারা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ জানান, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি চলমান রয়েছে। যাদের শোকজ করা হয়েছে তারা পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করলে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এ কারণে তাদেরকে শোকজ করে পাঁচদিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রস্তুতি সভায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক জুবায়েদ হোসেন, নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলামিন হোসেন বিজয়সহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া, বাগমারা, তানোর ও বাঘা উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, গ্রুপিং করে কেউ কোন্দলে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছেন।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে