অপচয়, চুরি, ওভারলোড ও বকেয়া বিল ঠেকাতে পার্বতীপুরে প্রিপেইড মিটার

এফএনএস (সোহেল সানী; পার্বতীপুর, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম
অপচয়, চুরি, ওভারলোড ও বকেয়া বিল ঠেকাতে পার্বতীপুরে প্রিপেইড মিটার

বিদ্যুতের অপচয়, চুরি, ওভার লোড ও বকেয়া বিল ঠেকাতে প্রিপেইড মিটার বসানো ও গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর। অটোমেশনের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা জনগনের দোরগোড়ায় নিতে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সুবিধার্থে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ সেবা দিতে ব্যাংক ও ভেন্ডিং স্টেশন নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রয়েছে। শাহজালাল ইসলামী, আইএফআইসি, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট, বেসিক, ইস্টার্ন, ইসলামী ও পুবালী ব্যাংক, নগদ, রকেট, টেলিক্যাশ, গ্রামীণ ফোন, উপায় ও বিকাশের মাধ্যমেও নিজের মুঠোফোন থেকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ভেন্ডিং সম্পন্ন করতে পারবেন। নেসকোর আওতায় পার্বতীপুরে প্রায় ১৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৩৫২ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। আর এই সব প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পাড়া মহল্লায় গণশুনানি, সভা, গ্রাহক সেবা অবহিতকরণ মাধ্যমে বাসাবাড়ি, পৌরসভা, সেচ পাম্প, বানিজ্যিক, অস্থায়ী, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন, ক্ষুদ্র শিল্প, দাতব্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রিপেইড মিটার এ জন্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানদের সমন্বয়ে কয়েকটি টিম কাজ করছে। 

এ ব্যাপারে পার্বতীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (নেসকো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: মাসুদ পারভেজ বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে পার্বতীপুর শহরের সব বাসাবাড়ির পূর্বের এনালগ বা ডিজিটাল মিটারের পরিবর্তে বর্তমানে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি এবং সঠিক বিদ্যুৎ বিল শতভাগ আদায়ের লক্ষ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকসেবা জনগনের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রিপেইড মিটার নতুন সংযোগ ও পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ হাজার মিটার সংযোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে গিয়ে নেসকো বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগেই টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং এতে বিদ্যুৎ বিল কম বেশি দেওয়া বা বিদ্যুৎ চুরি করার কোনো সিস্টেম নেই। এই প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের নিয়ে প্রিপেইড মিটারের সুবিধা বিষয়ে শহরের আনাছে কানাছে মতবিনিময় সভাও করা হয়েছে। প্রিপেইড সম্পর্কে কিছু মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে। এই ব্যবস্থা চালু হলে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হবেন গ্রাহকেরা। কারণ তারা যে, পরিমান টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন সেই টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বিল। আবার কখনো কখনো গ্রাহক পর্যায়ে নানা কারণে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে এবং বিদ্যুতের যথাযথ হিসাব রাখতেই নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রিপেইড মিটার সিস্টেম বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে অপচয় প্রায় শূন্য ভাগে নামিয়ে আনবে। প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা গ্রাহকদের সুবিধার জন্যই করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের সুবিধাগুলো হলো প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় গ্রাহক ব্যবহারের আগেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন। এতে মিটার রিডিং, বিল প্রণয়ন এবং আদায়ে কোনো ঝামেলা থাকে না। মিটারে প্রিপেইড সিস্টেম থাকায় গ্রাহক নির্দিষ্ট সীমার ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন না। গ্রাহক ব্যাংকেও ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে নিজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন। মিটারে টাকা শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহককে মিটার সংক্রিয়ভাবে সংকেত দেবে। ফলে বিদ্যুৎ সঞ্চয়ে গ্রাহক আরো সচেতন হবেন। প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হবে না। যেকোনো সময়ে গ্রাহক দেখতে পারবেন, তার কত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে আর কত অবশিষ্ট আছে। বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ দেওয়ার আগেই সব টাকা পেয়ে যাবে। ফলে বিল তৈরি ও বিতরণের ঝামেলা ও ব্যয় কমবে। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হবে না। ফলে লাইন কাটার দুশ্চিন্তা থাকবে না। গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ বিলের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন।  তিনি আরও বলেন, মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ব্যালেন্স শেষ হলে বিদ্যুৎ চলে যাবে। রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রিচার্জ শেষ হলে বিদ্যুৎ যাবে না। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনসহ বিকেল ৫টা থেকে পরেরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত মিটারে ব্যালেন্স না থাকলেও বিদ্যুৎ যাবে না। 

পার্বতীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (নেসকো) উপ-বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: হাসিবুর রহমান জানান, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে, অযথা ভোল্টেজ ওঠা-নামার ফলে বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ বিলের রেকর্ড থেকে যাবে। প্রিপেইড মিটারের ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এক্ষেত্রে বকেয়া বিল থাকবে না। এই বিষয়টি বাড়ির মালিকদের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা। 


আপনার জেলার সংবাদ পড়তে