সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বিতর্কিত অংশ বাতিল করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, তা দূর হলো বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। এখন থেকে সারাদেশের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করবে। আইনজীবীদের মতে, এ রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া এবং ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।
এর আগে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট সাতজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটে বলা হয়, মূল সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকলেও পরবর্তী সংশোধনীগুলোয় রাষ্ট্রপতির অধীনে দেওয়া হয়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ বিষয়ে শুনানি নেওয়ার জন্য বেঞ্চ গঠন করেন। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়ায় আগের বেঞ্চ ভেঙে যায়। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে পাঠানো হয়। কয়েক দফা শুনানি শেষে ১৩ আগস্ট রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয় এবং ২ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।
বর্তমান (সংশোধিত) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির হাতে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রাখার বিধান ছিল। অথচ ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে এই ক্ষমতা ছিল সুপ্রিম কোর্টের হাতে। আইনজীবীরা বলেন, এ পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল বিচার বিভাগের ওপর। হাইকোর্টের এই রায় কার্যকর হলে বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিম কোর্টের আওতায় ফিরে আসবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় বাস্তবায়ন হলে দেশের বিচার ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে এবং বিচার বিভাগ সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।