চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সার বোঝাই এমভি আল বাখেরা জাহাজে চঞ্চল্যকর ৭ জন খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলকে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় মামলাটি করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। রাতেই এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন।
বাদী মামলার এজহারে জাহাজে থাকা ৭ জনের খুন হওয়ার বিবরণে আহত ও খুন হওয়া ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেন। খুনের শিকার ব্যাক্তিরা হলেন-মাষ্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার মো. সজিবুল ইসলাম, লস্কর মো. মাজেদুল ইসলাম, সালাউদ্দিন, আমিনুর মুন্সী ও বাবুর্চি রানা কাজী। এছাড়া আহত ব্যাক্তি হলেন-সুকানী মো. জুয়েল (২৮)। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সেকান্দর প্রকাশ সেকেন্ড খালাসীর ছেলে।
মামলার বাদী মাহবুব মুর্শেদ এজহারের বিবরণে উল্লেখ করেন, আহত জুয়েল গলায় কাটা রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়ে কথা বলতে না পারায় ডাকাত দলের বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাদল দেখলে চিনবে বলে ইশারায় জানায়। জাহাজে জুয়েলসহ তারা ৯ জন ছিলো বলে লিখে জানায়। ৯ নম্বর ব্যক্তির নাম ইরফান। তবে তার ঠিকানা দিতে পারেনি।
ঘটনার পর পুলিশ ওই জাহাজ পরিদর্শনকালে একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সীল, একটি হেডফোন, এক মুঠো ভাত ও এক টেবিল চা চামচ তরকারি জব্দ করে বলেও এজাহারে উল্লেখ।
নৌ পুলিশ জানিয়েছে, আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে জাহাজে খুন হওয়া ৬ জনের মরদেহ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন ও নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। ওই সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবে বাবুর্চি রানা কাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন বলেন, রাতে ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মর্শেদ। মামলা নম্বর (১৭/১৬৬)।
উল্লেখ্য,গত সোমবার(২৩ ডিসেম্বর ২০২৪) সার বোঝাই এমভি আল বাখেরা নামক জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যা ও একজনকে গলাকাটা গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে রাতে বা দিনের কোন এক সময় সাতজনকে কুপিয়ে হত্যা ও একজনকে আহত করা হয়েছে।
ওইদিন দুপুরে জাহাজ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। হাইমচর উপজেলার মাঝির বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে জাহাজটি ভাসমান ছিল। চট্টগ্রাম থেকে সার নিয়ে জাহাজটি সিরাজগঞ্জের পথে ছিল বলে জানা গেছে। ডাকাত দল বা জাহাজে থাকা দুর্বৃত্ত এলোপাথারি কুপিয়ে সাজনকে আহত করে। এ সময় পাঁচজন ঘটনাস্থলে ও বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ ও জেলা পুলিশ।নৌ পথে পণ্যবাহী জাহাজে একসাথে সেভেন মার্ডার ঘটনাটি সারা দেশে বেশ চাঞ্চলের সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। পুলিশের সন্দেহ কাজে নয় জন স্টাফ ছিল। সাতজন খুন একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাহলে আরেকজন কোথায়? এই সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ধরার জন্য পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে।